দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই বৃদ্ধির জানা-অজানা নানা কারণ রয়েছে। সাধারণত হৃদরোগের অসুখ বলতে আমরা হৃদযন্ত্রের অক্সিজেন বহনকারী ধমনির সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যে অসুস্থতার সৃষ্টি হয় তা বুঝি। হৃদরোগের মূলত তিন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি আছে।
প্রথমত, নিয়মিত ওষুধ খাওয়া– এটা সব স্তরের চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য প্রযোজ্য। দ্বিতীয়ত, ইনভেসিভ চিকিৎসা– যেমন হৃৎপিণ্ডের বন্ধপ্রায় ধমনির মধ্যে ঢুকে এক বা একাধিক রিং (স্টেন্ট/পিসিআই) বসানো অথবা বুক কেটে বাইপাস সার্জারি (সিএবিজি) করা। তৃতীয়ত, কোনো ধরনের ইনভেসিভ পদ্ধতি ছাড়াই হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনির উপযুক্ত চিকিৎসা করা, যা কিনা ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল হৃৎপিণ্ডের ব্যথার রোগীর জন্য প্রযোজ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইইসিপি পদ্ধতি, যা বিজ্ঞানসম্মত, অত্যন্ত কার্যকরী, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন, ব্যয় সহনীয়, সহজ ও একটি নিরাপদ চিকিৎসাব্যবস্থা। ইইসিপি ইতোমধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হৃৎপিণ্ডের ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল এনজাইনা বা ব্যথায় সফলতার সঙ্গে বহুলাংশে ব্যবহার হয়ে আসছে। ইইসিপি কীভাবে কাজ করে আমাদের হৃৎপিণ্ড সিস্টোলের সময়ে পরিশোধিত রক্তকে নির্ধারিত চাপ ও গতিতে শরীরের অগণিত ধমনির মাধ্যমে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দেয় এবং ডায়াস্টোলের সময় এই রক্তের গতি অনেকটাই স্থির থাকে।
ইইসিপি এই ডায়াস্টোলের সময় শরীরের নিচের অংশের সব ধমনির ওপর শরীরের বাইরে অবস্থিত কাফের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাপ সৃষ্টি করে ও রক্তকে অপেক্ষাকৃত উচ্চ চাপে দ্রুত হৃৎপিণ্ডে ফেরত পাঠায়। এ কাজটি রোগীর ক্রমাগত ইসিজি, কম্পিউটার ও কম্প্রেসারের সমন্বিত কাজের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। দ্রুতগতিতে ফেরত আসা এই রক্তের তরঙ্গ হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনিতে উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করে। যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হয়, সেখানে একাধিক জৈব-বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে রক্ত চলাচলের জায়গা তৈরি করে বাধাকে অতিক্রম করে অক্সিজেন সংবলিত রক্ত হৃৎপিণ্ডের অসুস্থ জায়গায় পাঠাতে সক্ষম হয়। যার ফলে রোগীর হৃদরোগজনিত বুক ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। রোগীর দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা বাড়ে ও আগের মতো স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থায় ফেরত আসে। ইইসিপি চিকিৎসা পদ্ধতি আমাদের দেশেও জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে কোন পদ্ধতিটি রোগীর জন্য উপযুক্ত, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞই ভালো পরামর্শ দিতে পারেন।
লেখক: অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান কার্ডিওলজি ও মেডিসিন বিভাগ, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-১০, ঢাকা।