রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই ব্রিটিশ রাজের নতুন অধিপতি হয়েছে প্রিন্স চার্লস। যিনি এখন সাবেক প্রিন্স অব ওয়েলস।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের রাজ হতে চার্লসকে বেশ কিছু প্রথা ও রীতি এবং রাজকীয় সব আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এতে সময় লেগে যাবে বেশ কিছু দিন।
এখন থেকে তিনি পরিচিত হবেন রাজা তৃতীয় চার্লস নামে। রানির মৃত্যুর পর এক নাম বাছাই ছিলো তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের একটি।
চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ- একটি চারটি থেকে যে কোন একটি নাম বেছে নিতে হতো তাঁকে। তিনি সবচেয়ে পরিচিত ও এতোদিন নামের সঙ্গে থাকা চার্লসই বেছে নিয়েছেন।
চার্লসের স্ত্রীর জন্যও নতুন পদবী আসবে। তার পূর্ণাঙ্গ পদবী হলো কুইন কনসর্ট। কনসর্ট শব্দটি রাজা বা রানির স্ত্রী অথবা স্বামীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
রানির মৃত্যু প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা হিসেবে ঘোষিত হবেন। এটি ঘটবে লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে- অ্যাকসেশন কাউন্সিল নামে একটি সংঘের সামনে।
এই সংঘে রয়েছে প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যরা, যারা ব্রিটিশ রাজ ও পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এছাড়া আর ভিআইপিসহ মোট সদস্যের সংখ্যা সাতশ’ এর উপরে।
রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানে সব সদস্যের যোগ দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে। তবে সময় কম থাকায় চার্লসের অনুষ্ঠানে সব সদস্য উপস্থিতি নাও থাকতে পারেন।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না রাজা। অনুষ্ঠানে রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর ঘোষণা দেবেন প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট এবং একটি ঘোষণা পড়া হবে।
এই ঘোষণায় কিছু প্রার্থনা ও প্রতিশ্রুতি, সাবেক রাজ ব্যক্তিত্বদের প্রশংসা এবং নতুন রাজার প্রতি সমর্থন জানানো হয়ে থাকে। এতে স্বাক্ষর করবেন প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কিছু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।
অ্যাকসেশন কাউন্সিল আবার বসবে- এটা ঘটে থাকে সাধারণত একদিন পর, এবং এবারে প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে রাজা নিজেও যোগ দেবেন।
ব্রিটেনের রাজাকে কোন শপথ নিতে হয় না। তবে চার্চ অফ স্কটল্যান্ড সংরক্ষণে রীতি মেনে একটি শপথ নিতে হয় নতুন রাজাকে। চার্লসকেও নিতে হবে সেই শপথ।
পরে বাদ্যদলের আনুষ্ঠানিকতার পর চার্লসকে নতুন রাজা ঘোষণা করে জন সাধারণের জন্য একটি ঘোষণাপত্র জারি করা হবে।
এই ঘোষণা দেয়া হবে সেন্ট জেমস প্রাসাদের ফ্রিয়ারি কোর্টের উপরের একটি ব্যালকনি থেকে। গার্টার কিং অফ আর্মস হিসেবে পরিচিত একজন কর্মকর্তা এই ঘোষণা দেবেন।
হাইড পার্ক, টাওয়ার অফ লন্ডন ও নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে গান স্যালুট দেয়া হবে। কার্ডিফ ও বেলফাস্ট এবং এডিনবরায় চার্লসকে রাজা ঘোষণা করা ঘোষণাপত্র পড়ে শোনানো হবে।
অভিষেক হলো রাজা হিসেবে চার্লসের দায়িত্ব গ্রহণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি শেষ হতে বেশ কিছু দিন সময় লেগে যাবে নানা ধরনের আনুষ্ঠানিকতার জন্য।
৯০০ বছর ধরে অভিষেক অনুষ্ঠান হয় ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে। উইলিয়াম দ্যা কনকোয়ারার ছিলেন প্রথম রাজা, যার অভিষেক হয়েছিল সেখানে। আর চার্লস হবেন ৪০তম।
রাজার অভিষেক একটি অ্যাংলিকান ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা পরিচালনা করেন আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি। তিনি চার্লসের মাথায় সেন্ট এডওয়ার্ড মুকুট স্থাপন করবেন।
এটি খাঁটি স্বর্ণের তৈরি, যা ১৬৬১ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। টাওয়ার অফ লন্ডনে যেসব মণিমাণিক্য রাখা আছে, এটি তার মধ্যমণি। রাজা বা রানির অভিষেকে এটি পরেন তারা।
রাজার অভিষেক একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। সরকার এই অনুষ্ঠানের খরচ সরকার বহন করে এবং সরকারই এর অতিথি তালিকা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেয়।
অভিষেকের পর চার্লস নতুন দায়িত্বের প্রতীক হিসেবে রাজদণ্ড গ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত ও পাঠের সঙ্গে কমলা, গোলাপ, দারুচিনি, কস্তুরি এবং অম্বর ব্যবহার করা হয়।
চার্লস এখন ৫৬টি স্বাধীন রাষ্ট্র ও ২৪০ কোটি মানুষের সংগঠন কমনওয়েলথের প্রধান হয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যসহ ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাজা।