ব্রাজিলে করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারোর অভিশংসন ও কারাবাসের দাবিতে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো ও সাও পাওলো শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে হাজারো নাগরিকের ঢল নেমেছে। প্রতিবাদী ও ব্যঙ্গাত্মক ব্যানার-ফেস্টুন ও কার্টুনে তারা জাইয়া বলসোনারো ও তার পরামর্শক চিকিৎসক নিসে ইয়ামগুচির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন।
বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের অভিযোগ, জাইয়া বলসোনারোর প্রশাসন সংক্রমণ ঠেকাতে চূড়ান্ত ব্যর্থ। লাখো লাখো মানুষের মৃত্যুর পরও টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করতে প্রেসিডেন্টের মাথাব্যথা নেই। করোনাভাইরাস মহামারির পর ব্রাজিলে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যা বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ব্রাজিলের অবস্থান।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ব্রাজিলের গড়ে দৈনিক দুই হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। দেশটির ১১ শতাংশ নাগরিকের টিকার ডোজ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে ২৯ শতাংশ নাগরিক টিকার প্রথম ডোজই শুধু পেয়েছেন।
গত বছর ব্রাজিলে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে তার প্রতিবাদে মে মাসে ব্রাজিলে রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতা ও নাগরিকদের দ্রুত টিকাদানের দাবিতে রাজধানী ব্রাসিলিয়ার কংগ্রেসের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন ব্রাজিলিয়ানরা। পরে সে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য শহরে।
রিও ডি জেনেইরো শহরের প্রেসিদেন্তে ভার্গাস এভিনিউয়ের বিক্ষোভ থেকে স্কুলশিক্ষক পলা কুইরেজ গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস আমাদের বন্ধু, স্বজনসহ কতজনকে কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আমাদের কোনো কথাই কানে তুলছেন না। তার মন্ত্রণাদাতা চিকিৎসক নিসে ইয়ামগুচির পরামর্শ অনুযায়ী তিনি আমাদের ক্লোরোকুইন সরবরাহ করে যাচ্ছেন।’ ক্লোরোকুইন ম্যালেরিয়া ম্যালেরিয়ার বহু পুরনো এক ওষুধ।
প্রেসিডেন্টের এই খামখেয়ালি আচরণকে ‘মহা উপদ্রব’ হিসেবে দেখছেন রিও ডি জেনেইরোর ৭৫ বছর বয়সী প্রকৌশলী ওসহালদো পিনেরো। তিনি বলেন, তার এসব কর্মকাণ্ড আমাদের জন্য মহা উপদ্রব। বলসোনারোর প্রশাসন গণহত্যাকারী। এত মানুষ মরছে, তাদের কোনো মাথাব্যথাই নেই? আমি এ বয়সেও পথে নেমেছি। আমাকে প্রতিবাদ জানাতেই হবে।’
এদিকে ২০২২ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে তোড়জোড় শুরু করেছেন প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো। গত শনিবার তিনি সাও পাওলোতে সমর্থকদের নিয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেছেন। কিছুদিন আগে নির্বাচনী গণসংযোগে গিয়ে মাস্ক না পরায় তাকে জরিমানা গুনতে হয়েছে। গত বছর নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জোর গলায় বলছেন, তিনি টিকা নেবেন না।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত বছর থেকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নানা মহল থেকে কঠোর লকডাউনের পরামর্শ এলেও তা অগ্রাহ্য করেছেন জাইয়া বলসোনারো। তিনি বারবার অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার দোহাই দিচ্ছেন বলেও নীতিনির্ধারক মহল জানিয়েছে। স্প্যানিশ নিউজ এজেন্সি ইপা ব্রাজিলের জীববিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র বুতানতান ইনস্টিটিউটকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, তারা ১০ কোটি করোনাভ্যাক টিকা দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তাতে বলসোনারো প্রশাসন কোনো সায় দেয়নি। এরপর ফাইজারের ১৫ লাখ টিকার প্রস্তাবনাও ফিরিয়েছেন তিনি।