রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরমাণু নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নিউ স্টার্ট চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বাড়লো- বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। এদিকে, পুতিনের এমন বেপরোয়া আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর, পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ভয়ানক হবে বিশ্ব, বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ। খবর রয়টার্সের।
নিউ স্টার্ট-চুক্তির মধ্য দিয়ে পরমাণু কর্মসূচি সীমিতকরণের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৬ সাল পর্যন্ত ছিল এ চুক্তির মেয়াদ। তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইউক্রেন সফরের পরপরই চুক্তিটি স্থগিতের ঘোষণা দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর মধ্য দিয়ে ঝুঁকিতে পড়লো, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের সবশেষ চুক্তিটিও।
পুতিনের চুক্তি স্থগিতের ঘোষণাকে দুর্ভাগ্যজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে আখ্যা দিয়েছে ওয়াশিংটন। এ প্রসঙ্গে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়ের স্বার্থই দেখা হয়েছিল। এখানে মস্কোর দায়িত্বশীলতা দেখানো উচিত ছিল। রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্ত আসলেই দুঃখজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। তাদের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। আমাদের মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে, সমগ্র বিশ্বের নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে নিউ স্টার্ট চুক্তি বাস্তবায়নএর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিচ বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দুই পরমাণু শক্তিধরের মধ্যে এ চুক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেবল দুই দেশের জন্যই নয়; সমগ্র বিশ্বের জন্য। সেজন্যই চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে চাই। পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বিশ্ব হবে ভয়ঙ্কর। সে পরিস্থিতি এড়াতে সব ধরনের চেষ্টাই করতে হবে।
এমন সময়ে পরমাণু চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা এলো যখন, একের পর এক সামরিক মহড়ায় উত্তপ্ত ইউরোপ। সাম্প্রতিক কিয়েভ সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেনকে সহায়তা করা থেকে ওয়াশিংটন পিছপা হবে না। ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে শক্তিশালী ঐক্যের ডাকও দিয়েছেন তিনি। হুমকি-ধামকি আর সামরিক পদক্ষেপে পিছিয়ে নেই মস্কোও। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের।
এ প্রসঙ্গে নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়ান হার্ড বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া সম্পর্ক আরও জটিল সমীকরণে প্রবেশ করলো। রাশিয়া তাদের সামরিক পদক্ষেপ আরও বাড়াচ্ছে। যা বিপজ্জনক সংকেত। প্রেসিডেন্ট বাইডেনও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কড়া কথা বলেছেন। স্পষ্ট করেছেন ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়ে যাবেন। পুতিনের অনেক প্রতিবেশিই স্বাগত জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের পরিধি নিঃসন্দেহে বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে,’নিউ স্টার্ট’ চুক্তি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে। ২০২১ এ মেয়াদ শেষের কথা থাকলেও পরে তা আরও বাড়ানো হয়।