‘দেশে জীবনমানের উন্নয়ন অন্ধও দেখবে, শত্রুরও অস্বীকার করা উচিত নয়’

জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, বাংলাদেশে আজকে মানুষের জীবনমানের যে উন্নয়ন হয়েছে, সেটা অন্ধ হলেও দেখতে পারবে। এটা একজন শত্রুরও অস্বীকার করা উচিত নয়। সেটা অবশ্যই এই সরকারের সময়। গতকাল মঙ্গলবার সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনার শেষ দিনে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।করোনা মহামারির কথা উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, পৃথিবীর এখন একটা টলটলায়মান অবস্থা। অবস্থা কিছুটা এভাবে বলা যায়—সকাল বেলা যিনি রাজা, বিকাল বেলায় তিনি ফকির। এরকম একটা অবস্থায় বাংলাদেশ একটা বাজেট দিয়েছে। এ বাজেট গতবারের চেয়ে সামান্য একটু বেশি। এটাকে ডলারে রূপান্তর করলে আরও কম। কিন্তু এতত্সত্ত্বেও একটা বাজেট দেওয়া হয়েছে। একটা স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। একটা পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত আশার কথা।

তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটা টানাপোড়েন সেই পাকিস্তান আমল থেকে চলে আসছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলে বড় করেন, অর্থমন্ত্রী বলেন ছোট করেন। যেই বাজেট দেওয়া হয়েছে, সেটির মাত্র ৪০ শতাংশ ব্যবহার করতে আমরা সক্ষম হব। কিন্তু এমন একটা সময় ছিল, এই সেদিনও যেদিন ২০-২৩ শতাংশের বেশি আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হতাম না। বাজেট বাস্তবায়নে সেই অবকাঠামো এখনো আমরা সৃষ্টি করতে পারিনি। কিন্তু হচ্ছে, হবে। এই সেদিনও উল্লেখ করেছি যে, ২০, ২২, ৩০ শতাংশও কখনো আমরা অর্জন করতে সক্ষম হইনি। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমরা ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারি।’

‘দেশে জীবনমানের উন্নয়ন অন্ধও দেখবে, শত্রুরও অস্বীকার করা উচিত নয়’

জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ছবি: সংগৃহীত

 

জেপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের অর্থমন্ত্রী একজন অত্যন্ত মেধাবী ব্যক্তি। শুনেছি তিনি নাকি জীবনে কখনো সেকেন্ড পজিশন হননি। একটা বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এবং অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী, এটা উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন হয় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ১৫ বছরের অধিক সময় ক্ষমতায় আছেন। তাকে একজন প্রশাসক হিসেবে ঘণিষ্ঠভাবে দেখার আমার সুযোগ হয়েছিল। একটা উন্নত বাংলাদেশ, একটা সুখী বাংলাদেশ, অসুখ-বিসুখ নিয়ন্ত্রণে থাকুক—এরকম একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন তার আছে।

তিনি বলেন, ‘আমি পার ক্যাপিটাও বুঝি না, জিডিপিও বুঝি না। কিন্তু ৩৬ বছর বা ততোধিক সময়ে দেশের আনাচকানাচে ঘুরে দেখার অনন্য সুযোগ আল্লাহ তাআলা আমাকে দিয়েছেন। কী পরিবর্তন সেটা লক্ষ করেছি। আমি আমার নির্বাচনি এলাকায় যখন প্রথম যাই, তখন অবস্থা সেখানে কী ছিল? হোগলাপাতার ঘর। আমি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কথা বলছি। গোলপাতার ঘর, শণের ঘর। এখন সেখানে টিনের ঘর তো ডালভাত। দালান উঠছে, ছয়তলা দালান; রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট। আমি পত্রিকার লোক, এতত্সত্ত্বেও আমি বলব, তাদের দেশটাকে আরেকটু একনিষ্ঠভাবে দেখা উচিত ছিল। অভাব নেই। অভাব কোনটার? অভাব ব্যবস্থাপনার।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার বয়স এখন ৫০ বছর। অনেক বছর আগের কথা বলছি, জাতীয় প্রেসক্লাবে আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম, কিছু বিদেশি সাংবাদিকও ছিলেন। তারা আমাকে বললেন, কী উন্নয়নের কথা তোমরা বল? যে দেশে মানুষকে মানুষ টানে, মানে রিকশার কথা উল্লেখ করেছেন তারা। আজকে যন্ত্রচালিত যানবাহনের সংখ্যা এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যে, একসময় আমি যখন ঢাকা থেকে এলাকায় যেতাম স্পিডবোটে, চাঁদপুরের কাছে এলে দেখতাম বড় বড় পালওয়ালা নৌকা। সেগুলো এখন নাই। এমনকি ছোট ছোট নৌকাগুলোও এখন ইঞ্জিনচালিত। কৃষিক্ষেত্রে আমরা যতখানি আশা করি, ততটুকু যন্ত্রায়িত করতে পারিনি। নানা কারণে। আমাদের এখানে জমি ছোট ছোট। উত্তরবঙ্গের কথা একটু বাদ দিলাম। তাছাড়া এখানে যন্ত্রায়ণের বিকাশ হচ্ছে।’

জেপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘গ্রামে এখন এয়ারকন্ডিশনার আছে, ফ্রিজ আছে, বিউটি পার্লার আছে। ভান্ডারিয়াতে। আমি বললাম, কোথায় আসলাম! গোপালগঞ্জে আসলাম কি না! মানে একটা উদাহরণ দিলাম। এটা অবিশ্বাস্য। সমালোচনা আমিও করতে জানি, সমাধানও তো করতে হবে, আমাদেরই করতে হবে। এই সংসদকেই করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকেই করতে হবে। এই অর্থমন্ত্রীকে করতে হবে। এই পরিকল্পনামন্ত্রীকেই করতে হবে। সব মন্ত্রণালয়ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মানুষের দেহে যেরকম কলিজা-গিলা থাকে, এরা হলো তাই।’

 

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘এই বাজেটের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাদের জাতির ভেতরে, মানুষের ভেতরে এই “ধন্যবাদ” শব্দটা তারা বৈধ করেছে। কিন্তু ব্যবহার করে না তাদের দৈনন্দিন জীবনে। ধন্যবাদ বললেই বলে যে দালালি করে। আরে কার দালালি করব? কীসের জন্য দালালি করব? আল্লাহ যা দিয়েছেন, হাজার শুকরিয়া। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, অর্থমন্ত্রীকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে চাই। পরিকল্পনামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’