করোনার মধ্যেও প্রবাসী আয়ে রেকর্ড হয়েছে সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা টাকার হিসাবে ২ লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকার বেশি।
কোনো অর্থবছরের হিসাবে একসঙ্গে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স এর আগে দেশে আসেনি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ (২৯ জনু পর্যন্ত) ৪৬ দশমিক শূন্য ৮২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬০৮ কোটি ডলারের বেশি। টাকার হিসাবে ৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। এ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে দেশের ১১ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
সোমবার (৫ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ১৯৪ কোটি ডলার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা পুরো অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর পুরো অর্থবছরে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার বা ২ লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকার বেশি। এর আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) এসেছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার, যা সে সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ছিল। তার আগের অর্থবছরে (২০১৮-২০১৯) এসেছিলে ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার।
বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা গত অর্থবছরে বেসরকারি ৩৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৮১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের মাধ্যমে ৬১০ কোটি ৬২ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকে ৪১ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং আট বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। আর একক ব্যাংক হিসাবে প্রতিবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকের মাধ্যমে মোট ৭৪৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর পরই রয়েছে সরকারি অগ্রণী ব্যাংক, রাষ্ট্রায়াত্ত এ ব্যাংকে ২৮২ কোটি ৩২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৪৯ কোটি ডলার। আর সোনালী ব্যাংকে এসেছে ১৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স।
দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সরকারের নগদ প্রণোদনার কারণেই বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। পাশাপাশি আসন্ন কোরবানি ঈদকে (ঈদুল আজহা) সামনে রেখে প্রবাসীরা পরিবারের জন্য বাড়তি অর্থ পাঠাচ্ছেন।
এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৪৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। গত মঙ্গলবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক শূন্য ৮২ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আর প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসাবে দেশের এ রিজার্ভ দিয়ে ১১ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থাকতে হয়।