মোগল আমলের যেসব স্থাপত্য শিল্প সবার নজর কাড়ে, নোয়াখালীর বজরা শাহী মসজিদ তার মধ্যে অন্যতম। বজরা শাহী মসজিদ নির্মাণ করা হয় দিল্লি শাহী মসজিদের আদলে। নোয়াখালী মাইজদী প্রধান শহর হতে প্রায় ১৫ কি.মি. উত্তরে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা নামক স্থানে প্রধান সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে বিখ্যাত এই বজরা শাহী জামে মসজিদ অবস্থিত। মসজিদের স্থাপত্য শৈলীর কারণে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ বজরায় আসেন এর সৌন্দর্য্য দেখার জন্য। সরকার সময় উপযোগী উদ্যোগ নিলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হবে বজরা শাহী মসজিদ। দিল্লির মোগল সম্রাটগণ ভারতবর্ষে ৩০০ বছরের অধিকাল রাজত্ব করেন।
এ দীর্ঘ সময়কালে মোগল সম্রাটগণ এবং তাদের আমলারা বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ইমারত, মসজিদ নির্মাণ করেন যা আজও স্থাপত্য শিল্পের বিরল ও উজ্জ্বল নির্দশন হিসেবে বিরাজমান। এগুলোর মধ্যে আগ্রার তাজমহল, সেকেন্দ্রা, দেওয়ানে আম, আগ্রার দূর্গ, দিল্লির লাল কেল্লা ও দিল্লির শাহী জামে মসজিদ অন্যতম। মোগল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের আমলে দিল্লির বিখ্যাত জামে মসজিদের অনুকরণে জমিদার আমান উল্যাহ ১১৫৪ হিজরিসাল, ১১৩৯ বাংলা মোতাবেক ১৭৪১ সালে অর্থাৎ প্রায় তিনশত বছর পূর্বে বজরা শাহী মসজিদ নির্মাণ করেন, যা আজও মোগল স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে।
জমিদার আমান উল্যাহ তার বাড়ির সম্মুখে ৩০ একর জমির ওপর উঁচু পাড় যুক্ত একটি বিশাল দীঘি খনন করেন। এ দিঘীর পশ্চিম পাড়ে মনোরম পরিবেশে আকর্ষণীয় তোরণ বিশিষ্ট প্রায় ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য ৭৪ ফুট প্রস্থ এবং প্রায় ২০ ফুট উঁচু ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট এ ঐতিহাসিক মসজিদখানা নির্মাণ করেন। এ মসজিদকে মজবুত করার জন্য মাটির প্রায় ২০ ফুট নিচ থেকে ভিত তৈরি করা হয়। সুদৃশ্য মার্বেল পাথর দ্বারা গম্বুজগুলো সুশোভিত করা হয়। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে ৩টি ধনুকাকৃতি দরজা। মসজিদের প্রবেশ পথের উপর রয়েছে কয়েকটি গম্বুজ। কেবলা দেওয়ালে ৩টি কারুকার্য খচিত মিহরাব আছে।
মোগল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের বিশেষ অনুরোধে পবিত্র মক্কা শরীফের বাসিন্দা, কারো মতে দিল্লির বাসিন্দা তৎকালীন অন্যতম বুজুর্গ আলেম হযরত মাওলানা শাহ আবু সিদ্দিকী এ ঐতিহাসিক মসজিদের প্রথম ইমাম হিসেবে নিয়োজিত হন। তার বংশধরগণ যোগ্যতা অনুসারে আজও এ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে প্রথম ইমাম সাহেবের সপ্তম পুরুষ ইমাম হাসান সিদ্দিকী উক্ত মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। বজরা শাহী মসজিদে বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে নামাজ আদায় করেন। গত ১০ বছর ধরে মহিলারও নামাজ পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন এ মসজিদে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৯৮ সালে ২৯ নভেম্বর সরকারি গেজেটে মসজিদটিকে প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে মোঘল স্থাপত্যকলায় নির্মিত এই মসজিদটির সৌন্দর্য্য অম্লান হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। বর্তমানে মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নতুন করে সিরামিক স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো মসজিদকে আনা হয়েছে সিসি ক্যামেরার আওতায়। আপনিও আসতে পারেন মসজিদটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ঢাকা থেকে সরাসরি সোনাইমুড়ী যেতে পারেন অথবা নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদী হতে সোনাইমুড়ীর যেকোনো লোকাল বাস সার্ভিস, সিএনজি অথবা অটোরিকশা যোগে বজরা হাসপাতালের সামনে নেমে রিকশা বা পায়ে হেঁটে ২০০ গজ পশ্চিমে গেলে বজরা শাহী মসজিদে পৌঁছানো যাবে।