সড়ক নিরাপত্তায় হুমকি মোটরসাইকেল ও ট্রাক

চলতি বছরের গত জুন মাসে দেশে ৩২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪২৩ জন। মে মাসের তুলনায় জুনে সড়ক দুর্ঘটনা কম। গত মে মাসে ৪৪১টি দুর্ঘটনায় ৫৬২ জন নিহত হয়েছিল। গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছিল ১৮ দশমিক ১২ জন। জুন মাসে প্রতিদিন নিহত হয়েছে ১৩ দশমিক ২৬ জন। তবে জুন মাসের অর্ধেক সময় জুড়ে এলাকাভিত্তিক লকডাউনে বিভিন্ন জেলা শহরে যানবাহন বন্ধ ছিল এবং ২৮ জুন থেকে সর্বাত্মক লকডাউনে সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ ছিল বলে সড়ক দুর্ঘটনা ও নিহতের সংখ্যা কম বলে জানিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

সড়কে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চরম হুমকি হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেল ও ট্রাক বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন এবং অন্যান্য যানবাহনকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে একটি সমন্বিত টেকসই উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

গতকাল ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৫২ জন নারী ও ৩৩ জন শিশু। ১৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫২ জন নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৯৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৭ জন।

গত জুনে দুইটি নৌ-দুর্ঘটনায় দুই জন নিহত এবং একজন আহত হয়েছে। এ ছাড়া একটি রেলপথ দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, ফাউন্ডেশন সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

তাদের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১১৫টি (৩৫ দশমিক ১৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১২৭টি (৩৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৫১টি (১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৩০টি (৯ দশমিক ১৭ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে চারটি (১ দশমিক ২২ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনাসমূহের ৭৮টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১১৩টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯৭টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৩৫টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং চারটি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

রোড সেফটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনার ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ ঘটেছে ভোরে, ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ সকালে, দুপুরে ২২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বিকালে ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ দুর্ঘটনা রাতে ঘটে থাকে। গত জুনে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৮৬টি দুর্ঘটনায় নিহত ১০৩ জন। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। ২৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ২২ জন। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহ জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৯টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত। সবচেয়ে কম নড়াইল জেলায়। দুইটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ হতাহত হয়নি।

সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, মূলত ১০ কারণে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে—ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি

image_pdfimage_print