কথাবার্তায় শিক্ষিত বা শহুরে ভাব। চলন-বলন কর্মকর্তার মতো। বেশভূষায় তাদের অফিসার মনে হলেও আদতে পেশা চুরি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে তারা অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নেন জিনিসপত্র। দীর্ঘদিন স্থান পরিবর্তন ও পরিচয় বদলে এসব অপকর্ম চালালেও শেষ রক্ষা হয়নি। বগুড়ায় একটি মোবাইল ফোনের দোকানে চুরির সূত্র ধরে এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের প্রধান ইয়াসিন আরাফাতকে। শুক্রবার রাতে কুমিল্লা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারই দেওয়া বর্ণনায় উঠে এসেছে নতুন কৌশলে চুরির বিষয়ে নানা তথ্য।
ইয়াসিন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। জেলা শহরের তেলিকোনা মা-মণি হাসপাতালের সামনে থেকে তাকে ধরা হয়। এ সময় তার হাতে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে পাঁচটি মোবাইল ফোনসহ চুরি করা নানারকম জিনিস পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে বগুড়ার নন্দীগ্রাম সদরের জনতা মার্কেটের মা মোবাইল প্যালেসে চুরির ঘটনা ঘটে। চোর চক্র দোকানের তালা কেটে টাকাসহ ৪৫টি মোবাইল ফোন লুট করে। এ ঘটনায় দোকানের মালিক ব্যবসায়ী খালিদ হাসান নন্দীগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। সেই সূত্র ধরে পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে দেখে বেশ কয়েকজন চোরের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। এই চক্রের সদস্য ১০ জন। তাদের মধ্যে চারজন করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে চুরির উপযোগী দোকান খুঁজে। খাতায় টুকে রাখা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ও ঠিকানা, ধারণ করা হয় ভিডিও। পরে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সেখানে সুযোগ বুঝে হানা দেন তারা।
নন্দীগ্রাম থানায় এই চুরির মামলা তদন্ত করছেন এসআই জিয়াউর রহমান। রোববার তিনি জানান, গ্রেপ্তার ইয়াসিনের নামে ঢাকা, ভোলা, গাজীপুর ও কুমিল্লার বিভিন্ন থানায় ছয়টি চুরির মামলা আছে। এই চক্রের অন্য সদস্যরা হলো– কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঁশকাইট এলাকার আবুল কাশেম, একই উপজেলার কামালপুর এলাকার শরিফুল ইসলাম ওরফে জামাই শরীফ, শোলা পুকুরিয়ার ইকবাল হোসেন, তিতাস উপজেলার মাছিমপুরের ফারুক হোসেন, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হাতিরবন্দ এলাকার মহরম মজিব, একই উপজেলার সাচার হাতির বোন মুছা হাজীর বাড়ি এলাকার মনু মিয়া ওরফে মানিক, নরসিংদীর রায়পুরার মধ্যনগর চর এলাকার মোকারম হোসেন রুবেল ওরফে মনির, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কালামুড়িয়া মাজার বাড়ি পশ্চিমপাড়ার সোহেল ওরফে মোটা সোহেল ও হাবিব। এরা নিজেদের কখনও সরকারি কর্মকর্তা বা বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয় দেয়। বেশভূষায় ও চলনে বোঝার উপায় নেই আদতে এরা চোর।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে অপরাধীদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ বড় চোর চক্রের সদস্য। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে গহনা, মোবাইল ফোন ও বিকাশের দোকানসহ বড় দোকান লুট করে তারা। ১০ মিনিটের ব্যবধানে সব লুট করার দক্ষতা আছে তাদের। চক্রের সদস্যরা কৌশলগত কারণে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে এবং তাদের মধ্যে মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহার করে কোনো যোগাযোগ করা হয় না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোতে চুরির পরিকল্পনা ও নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা সারেন।
এসআই জিয়াউর বলেন, ইয়াসিনকে বগুড়ায় আনা হয়েছে শনিবার। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এই চক্রের অন্য সদস্যদের নাম-ঠিকানাসহ মামলার কাগজপত্র আদালতে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হবে। একই সঙ্গে রোববার ইয়াসিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।