বাডস কিন্ডারগার্টেন স্কুল। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর-পাহাড়তলী) আসনের কেন্দ্র। নগরীর ওয়াসা মোড়ে থাকা এ কেন্দ্রে রোববার সকাল ৮টায় শুরুর প্রথম চার ঘণ্টায় ভোট পড়ে মাত্র ৩ শতাংশ। আর শেষের চার ঘণ্টায় পড়ে ৯ শতাংশ। এতে এ কেন্দ্রে ভোট পড়ে মাত্র ১২ শতাংশ। চট্টগ্রাম মহানগরীর অন্তত ১০টি কেন্দ্রে সকালের চার ঘণ্টা ও দুপুরের চার ঘণ্টার ভোটার উপস্থিতির তুলনামূলক চিত্র পর্যালোচনায় প্রায় একই রকম চিত্র পাওয়া গেছে।
নগরীতে দুপুরের পর ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশায় ছিলেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। কিন্তু দিনভর অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত ভোটারের দেখা মেলেনি কয়েকটি কেন্দ্রে। ভোটের শুরু থেকে কেন্দ্রগুলোতে দেখা যায়নি সব প্রার্থীর এজেন্টও। নৌকা ও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়া কোনো বুথে অন্য প্রার্থীর প্রতিনিধি পাওয়া যায়নি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট দলের প্রার্থীর এজেন্টরা ‘উধাও’ হয়ে যান কেন্দ্র থেকে।
বাডস কিন্ডারগার্টেন স্কুল কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ২৭৪ জন। তবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এখানে ভোট পড়ে মাত্র ৪১৫টি; যা মোট ভোটারের তুলনায় মাত্র ১২ শতাংশ। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘সকালে ভোট শুরুর পর নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। অন্য প্রার্থীদের কয়েকজন আমাদের কাছ থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করলেও কেন্দ্রে কাউকে পাইনি। দুপুরের পর ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে ধারণা করলেও তেমন বাড়েনি।’
অভিন্ন অবস্থা শাইনিং আইডিয়াল স্কুলকেন্দ্রেও। এখানে মোট ভোটার ৩ হাজার ২১২ জন। কেন্দ্রটিতে সকালের চার ঘণ্টায় ভোট পড়ে প্রায় ৪ শতাংশ। দুপুরের চার ঘণ্টায় এটি বেড়ে ১২ শতাংশের ওপরে গিয়ে দাঁড়ায়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত এখানে ভোট পড়ে মাত্র ৬৩৫টি। এ কেন্দ্রের সাতটি বুথের প্রতিটিতে নৌকার বিপরীতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা ফুলকপি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। তবে পাওয়া যায়নি অন্য কোনো দলের এজেন্ট। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আসনটিতে মোট ১০ জন প্রার্থী থাকলেও কেন্দ্রে দুই প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট আসেনি। কেন্দ্র ও বাইরে এজেন্টদের খুঁজেও পাইনি। ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ বাড়েনি।’
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকারি কমার্স কলেজ কেন্দ্রেও অভিন্ন চিত্র। এ কেন্দ্রের ছয়টি বুথেই নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ও তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেটলি প্রতীকের জিয়াউল হক সুমনের এজেন্টদের সরব উপস্থিতি ছিল। তবে আর কোনো প্রার্থীর এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ কেন্দ্রেও ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ভোট পড়ে ৫ শতাংশের কিছু বেশি। বিকেল ৪টা পর্যন্ত এখানে ভোট পড়ে ৪৩১টি। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার আড়াই হাজার। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জয়ন্ত ভৌমিক বলেন, ‘আসনটিতে নির্বাচনে বিভিন্ন দলের সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কেবল দুই প্রার্থীর এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন। অন্য দলের এজেন্ট আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’
পাঠানটুলী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে রোববার সকালে অন্য দলের এজেন্টরা দায়িত্ব পালন করতে আসেন। তবে এর কিছুক্ষণ পর তারা কেন্দ্র থেকে ‘উধাও’ হয়ে যান। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সকালের দিকে ছোট দলের কয়েকজন এজেন্টকে দেখেছিলাম। তবে এর কিছুক্ষণ পর দেখি তারা কেন্দ্রে নেই। বুথে গিয়ে দেখি কাগজপত্র আছে কিন্তু এজেন্ট নেই। কয়েকজনকে কেন্দ্রে থাকতে অনুরোধ করেও রাখতে পারিনি।’ সুপ্রিম পার্টির এজেন্ট মো. সামশুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘সকালে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে গেলেও নৌকার এজেন্ট ও কর্মী-সমর্থকরা জোর করে আমাদের বের করে দিয়েছে।’