পাসপোর্ট আবেদনের গোপনীয় কপি প্রতারকদের হাতে

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর থানার বাসিন্দা সোবহান হাসান মোরসালিন কয়েক দিন আগে তার পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তরে (ডিআইপি) আবেদন করেন। দু-তিন দিন পর এক ব্যক্তি নিজেকে পুলিশের এসবির (বিশেষ শাখা) সাব-ইন্সপেক্টর পরিচয় দিয়ে তার মোবাইল ফোনে কল করেন।

ঐ ব্যক্তি তাকে বলেন, আপনার আবেদনের সঙ্গে সব কাগজপত্র আমরা পেয়েছি। আপনাকে মালিবাগের এসবি অফিসে আসতে হবে না। আর আপনার কাগজপত্র পরীক্ষা করার জন্য রূপনগরের বাসায় যাব না। আমি আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশন করে দিচ্ছি। কালই রিপোর্ট পাসপোর্ট অফিসে পাঠিয়ে দেব।’

প্রত্যুত্তরে সোবহান ধন্যবাদ জানালে অপর প্রান্ত থেকে ঐ ব্যক্তি ‘চা খাওয়া’র নামে টাকা দাবি করেন। ঐ ব্যক্তি ০১৯৯২১১৫০৩৩ নম্বর দিয়ে ১ হাজার টাকা বিকাশ করতে বলেন। এরপর সোবহান পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য বিকাশে ১ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। এর দুই-তিন দিন পর পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর তাকে ফোন দিয়ে জানান যে, রূপনগরে আপনার বাসায় আসব, পাসপোর্ট আবেদনের কপি যাচাই-বাছাই করার জন্য। এই ফোন পেয়ে সোবহান বলেন, দুই দিন আগে তো ভেরিফিকেশন করিয়ে দেওয়ার জন্য একজন সাব-ইন্সপেক্টরকে বিকাশে ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ কথা জানার পর এসবির ওই সাব-ইন্সপেক্টর রূপনগরে সোবহানের বাড়িতে হাজির হন এবং তার পাসপোর্ট আবেদনের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে দেন। তখন সোবহান বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

পাসপোর্ট আবেদনের গোপনীয় কপি প্রতারকদের হাতে

পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে শত শত প্রতারণার অভিযোগ বিশেষ শাখার পাসপোর্ট শাখায় জমা পড়েছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন যে, প্রতারক চক্র পাসপোর্টের আবেদনে দেওয়া ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য জেনেই ফোন দেয়। প্রতারকেরা ফোন দেওয়ার সময় আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র সবকিছুই হুবহু বলে। ফলে ঐ ব্যক্তিকে এসবির পুলিশ কর্মকর্তা বলে বিশ্বাস হয়। তাই তার দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশের বিশেষ শাখার পাসপোর্ট শাখায় প্রতারণার এরকম অভিযোগ পড়েছে শত শত। মানিকগঞ্জের রুবেল, ঢাকার ফাতেমা বেগম, নীরব সরকার, ঢাকার মিরপুরের মনিরা আক্তার, রামপুরার ফারুক আব্দুল্লাহ, নয়ন মণ্ডলসহ শতাধিক ব্যক্তির পাসপোর্টে আবেদন করা ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য ধরে প্রতারক চক্র পুলিশ পরিচয়ে ফোন দেয়। বিকাশ নম্বর দিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য তারা ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা আদায় করে।

এসব বিষয়ে পুলিশের এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার (পাসপোর্ট) ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘২০১৭ সালে এরকম একটি প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে আমরা পিবিআইয়ের সহায়তায় গ্রেফতার করি। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে যে, প্রতারণার টাকার অঙ্ক ৫০০ থেকে ১ হাজার। কিন্তু এতে এসবির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভাবছে, হয়তো পুলিশই প্রতারণা করছে। আসলে আমরা চেষ্টা করছি এটা কীভাবে রোধ করা যায়। অনেক সময় দেখা যায়, পাসপোর্টের আবেদন পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য এসবি অফিসে আসার আগেই প্রতারক চক্র আবেদনকারীকে ফোন করে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য পাসপোর্ট আবেদনকারীকে সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য কোনো ধরনের টাকা লেনদেনের সুযোগ নেই। কেউ টাকা দাবি করলে সংশ্লিষ্ট এসবি অফিসে অভিযোগ দিলে আমরা অভিযোগকারীর নাম-পরিচয় গোপন রেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

পাসপোর্ট আবেদনের গোপনীয় কপি প্রতারকদের হাতে

এদিকে এসবির পাসপোর্ট শাখা বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পেয়েছে যে, আবেদনকারীর এসব গোপন তথ্য কম্পিউটারের দোকান থেকে আবেদন করার সময় প্রতারক চক্রের হাতে চলে যায়। আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আশপাশের কম্পিউটারের দোকানগুলো থেকে যারা আবেদন করেন, তাদের তথ্যই প্রতারক চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে। দোকানে যারা কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করেন, তাদের সঙ্গে প্রতারক চক্রের যোগাযোগ থাকে।

এসবির পাসপোর্ট শাখার আরেকটি সূত্র জানায়, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বাইরে ঢাকাসহ সারা দেশে আঞ্চলিক ও জেলা পাসপোর্ট অফিসগুলোর আশপাশের কম্পিউটারের দোকানগুলোতে এরকম প্রতারক চক্র