পদোন্নতি চাইতে গিয়ে ধরা পড়ল মুরাদের জালিয়াতি

স্নাতক পাসের আগেই ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ দেখিয়ে নিয়োগ কমিটির যোগসাজশে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের সহকারী প্রোগ্রামার পদে চাকরি নেন মুরাদ শিকদার। ২০১৬ সালে নিয়োগ পেয়ে চার বছর নির্ঝঞ্ঝাট চাকরি করেন। বিপত্তি বাধে পদোন্নতি চেয়ে কাউন্সিলে আবেদন করে। ধীরে ধীরে বের হয়ে আসে থলের বিড়াল। তাঁর নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পায় পদোন্নতি দিতে গঠিত উপকমিটি।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সহকারী প্রোগ্রামার পদে বেতন স্কেল গ্রেড-১০ নির্ধারণ করা হয়। সরকারি বিধি ও বিভিন্ন সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী ওই পদের বেতন স্কেলের সমতা না হওয়ায় সহকারী প্রোগ্রামার মুরাদ গ্রেড-৯ অনুযায়ী বেতন পেতে নার্সিং কাউন্সিলে আবেদন করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, শিক্ষা সনদ, নিয়োগপত্র এবং অভিজ্ঞতার বিষয় কাউন্সিল জানতে চাইলে ব্যক্তিগত নথি উপস্থাপন করেন তিনি। এর পর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি ২০২০ সালে তাঁর নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং ব্যক্তিগত কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য উপকমিটি গঠন করে। এই কমিটি তদন্ত করে নার্সিং কাউন্সিলে প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সহকারী প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। আবেদন জমার শেষ দিন ছিল ২৯ সেপ্টেম্বর। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর অথবা কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতকসহ সফটওয়্যারের কাজে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মুরাদ তখন স্নাতকের শিক্ষার্থী। বেসরকারি আইটি প্রতিষ্ঠান সিএসএলআইটিতে দুই বছরের চাকরির অভিক্ষতা দেখান তিনি। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর। কাউন্সিলের আইন অনুযায়ী মুরাদ এই নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারেন না।
নার্সিং কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শুধু প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কাউন্সিলের আইন অনুযায়ী দুটি জাতীয় দৈনিকে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা ছিল। কিন্তু সেটা করা হয়নি। যে কারণে এই পদে দুটি আবেদন পড়ে। সরকারি সব নিয়োগের আগে ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ নেওয়া হয়। তবে এই নিয়োগে তা নেওয়া হয়নি।

সেই সময় নিয়োগ কমিটিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুভাষ চন্দ্র সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বেগম নাসিমা পারভীন, নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার বেগম সুরাইয়া বেগম ছিলেন। তাদের মধ্যে দু’জন মারা গেছেন। অবসরে যাওয়া নাসিমা পারভীনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে চাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নার্সিং কাউন্সিলের একাধিক সদস্য বলেন, শুধু মুরাদকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আরেকজন ডামি প্রার্থীকে দিয়ে আবেদন করানো হয়। পদোন্নতির জন্য গঠিত উপকমিটি তাঁর জালিয়াতির প্রমাণ পেলেও ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুরাদ শিকদার বলেন, নিয়োগ কমিটিতে যারা ছিলেন তারা সবকিছু যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দিয়েছেন। স্নাতক পাস করার আগে কীভাবে আবেদন করেছেন এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কীভাবে নিয়োগ হলো–জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব নিয়ম মেনে করা হয়েছে।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নাসির উদ্দিন বলেন, কিছু দিন হলো আমি দায়িত্ব পেয়েছি। বিষয়টি জানা ছিল না। তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।