নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামে বিবস্ত্র করা সেই নারীকে (৩৭) ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দুই আসামি দেলোয়ার বাহিনী প্রধান দেলোয়ার হোসেন দেলু ও তার প্রধান সহযোগী মোহাম্মদ আলী ওরফে আবুল কালামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত আসামিদেরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সোমবার (৪ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জয়নাল আবেদীন আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ লাবলু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আলোচিত গৃহবধূ ধর্ষণ মামলায় আমরা বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদান, জেরা ও জবানবন্দি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১২জন ও আসামী পক্ষে ৩ জন সাপাই সাক্ষী দেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, দুই দফায় ধর্ষণের অভিযোগে ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বেগমগঞ্জ থানায় দেলোয়ার ও কালামকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ওই নির্যাতিতা নারী। পরে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে পিবিআই গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর এই দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। আদালত পরবর্তীতে এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। গত প্রায় সাত মাসে সাক্ষ্য গ্রহণ, শুনানি ও যুক্তিতর্ক শেষে আদালত আজ এ রায় প্রদান করেন।
২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বরে বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ওই নারীর স্বামীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে এবং মোবাইল ফোনে ভিডিও চিত্র ধারণ করে তারা । নির্যাতিতা ওই নারী জেলা শহর মাইজদীতে তার বোনের বাসায় পালিয়ে এসে চিকিৎসা নেন। এ অবস্থায় অভিযুক্তরা তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে, তা না হলে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাবদেন। এতে ওই নারী রাজি না হওয়ায় আগের ধারণকৃত সেই ভিডিও ৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ ফেইজবুকে ছড়িয়ে দেয় । এ ঘটনার পর ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও পর্ণোগ্রাফি আইনে দুইটি মামলা করেন নির্যাতিতা নারী।
বিবস্ত্র করে নির্যাতনের আগে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার তাঁকে দুই দফা ধর্ষণ করেছেন। এর মধ্যে প্রথম দফা ধর্ষণ করে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর, দ্বিতীয়বার ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল। ধর্ষণের সময় দেলোয়ারের সহযোগী আবুল কালামও তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় দেলোয়ার ও কালামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন ওই নারী। মামলাগুলো পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনায় সে সময় সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে।