দক্ষিণাঞ্চলে -উত্তর সংক্রমণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে

দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। ইতিমধ্যে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সারাদেশে ছড়িয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ বাড়ছে। এতে দেশে উদ্বেগ বাড়লেও ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ কম।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে লডকাউন দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। অক্সিজেন, আইসিইউসহ চিকিত্সার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এই সব এলাকাকে গণসচেতনতার আওতায় আনা না গেলে মৃত্যু হার বাড়বে। অধিক সংক্রমিত জেলাগুলো হলো, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নওগাঁ, নাটোর, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গা।

ভারত সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলা, উপজেলা ও গ্রামে লকডাউন ঘোষণা ছাড়াও কিছু কিছু এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও এলাকাগুলোর করোনা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। জেলা বা উপজেলা হাসপাতালগুলোতে করোনার চিকিত্সার সুব্যবস্থা না থাকায় এবং জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতার অভাব পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। সীমান্তবর্তী অধিকাংশ জেলায় আইসিইউ নেই। অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জেলায় করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে।

করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় সম্পূর্ণ এবং সাতটি জেলায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেওয়া হয়েছে। আরও ছয়টি জেলা লকডাউন করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। জেলাগুলো হচ্ছে নওগাঁ, নাটোর, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গা। এদিকে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ দুটি। এক. ভারত থেকে বৈধ পথে যারা আসছেন তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও অবৈধ পথে যারা আসছেন তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন না। অন্যদিকে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে করোনা টেস্ট করতে হচ্ছে। আবার রিপোর্ট পেতে দেরি হয়। আসা-যাওয়ার এই সময়ে অনেককে সংক্রমিত করছে তারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মানাতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। একই সঙ্গে ব্যাপক হারে ভ্যাকসিন দিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বর্তমানে অধিক সংক্রমিত দেশের উত্তরাঞ্চল সফরে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কঠোর লকডাউন প্রয়োগ করতে হবে। লকডাউন এলাকাসমূহে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আইইডিসিআরের প্রধান উপদেষ্টা. ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ভারত থেকে আসা নাগরিকদের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে না পারায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ বাড়ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণ স্থিতিশীল

রবিবার (৬ জুন) চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ও শিবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিদর্শন করার পর বিকালে সদর হাসপাতালে সাংবাদিকের অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কঠোরভাবে লকডাউন পালন করা হচ্ছে। এর ফলে সংক্রমণ বাড়েওনি, কমেওনি। প্রসঙ্গত, জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৪২ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট ২৪৮৯ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছে ৬২ জন।