পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেছেন, জিয়া বন্দুকের নলের মুখে পেছনের দরজা দিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল। বিচারপতি সায়েমকে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য করে।
সোমবার (৩০ মে) শরীয়তপুরের সখিপুর থানার চরকুমারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বর্ধিত সভা এবং সদস্য নবায়ন ও সংগ্রহ কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এনামুল হক শামীম বলেন, জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে রাজাকার ও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের পুনর্বাসন করে, এমনকি রাষ্ট্রের উচ্চপদে আসীন করে। অনেক দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধা, ও সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য আজকে এই দিনে অভিনব ‘হ্যা’ ও ‘না’ ভোট করে শতকরা ১০০ থেকে ১২০ ভাগ ভোট পাওয়া দেখায়। যে নির্বাচনে জিয়া একাই প্রার্থী ছিল। নিজেই বিচারকদের আদালতের রায় লিখে দিত। অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসি দিয়েছে। দেশে হত্যা-গুম ও খুনের রাজনীতি চালু করে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাক্ষাৎকারই প্রমাণ করে জিয়াই বঙ্গবন্ধু হত্যার মাস্টারমাইন্ড।
তিনি বলেন, জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়াও একই কায়দায় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল। আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কারণেই অল্প কয়েকদিনের মাথায় জনরোষে তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ২০০১ সালের পর খালেদা জিয়া হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করে, গুম করে, অনেককে পঙ্গু করেছে।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী বলেন, তারা জাতীয় নেতা শাহ এমএস কিবরিয়া, আহসানউল্যাহ মাস্টারসহ অনেক জাতীয় নেতাকে হত্যা করেছে। ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তাদের নির্মম নির্যাতনে অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। জিয়া-খালেদা’র দুঃশাসনের কথা মানুষ ভুলে নাই।
উপমন্ত্রী শামীম বলেন, খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার করা এখন সময়ের দাবি। জিয়াই প্রথম এ দেশের ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। জিয়ার শাসনামলে এমন কোনো অপকর্ম নেই সে করেনি। ওই সময় দেশে হত্যা, গুম, ধর্ষণ বেড়ে গিয়েছিল। দেশের সব প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের নামেও প্লেট চুরির মামলা দিয়েছিল। তাদের নির্যাতনের কথা মনে পড়লে আজও অনেকের গাঁ শিউরে ওঠে। এদেশের কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে নাই। কারণ, জিয়া-খালেদার দুঃশাসনের কথা মানুষ ভুলে নাই। তারা যদি আওয়ামী লীগের মত এক নাগাড়ে ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকত তাহলে আওয়ামী লীগের একজন নেতাকর্মীকেও বাঁচিয়ে রাখত কিনা তা নিয়েই সন্দেহ আছে।
এনামুল হক শামীম বলেন, ক্ষমতায় থাকতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়েছে, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস করেছে, বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। আর ক্ষমতায় না থাকতে পেরে দেশকে অস্থিতিশীল করতে আগুন সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করেছে। তাই দেশের মানুষ আর তাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বিএনপি এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নামসর্বস্ব দলে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে তারা দেশ-বিদেশে নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, এদেশের জনগণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তারা আগুন সন্ত্রাসী ও দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের নয়, বারবার আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় চায়। কারণ, আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হলে জননেত্রী শেখ হাসিনা শক্তিশালী হয়, আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্তিশালী হলে বাংলাদেশ শক্তিশালী হয়। আগামী নির্বাচনেও সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে পঞ্চমবারের মত প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।
উপমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি জানে, তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে না। তারা তো জানেই খালেদা ও তারেক রহমান নির্বাচনের অযোগ্য; তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাই তারা মাঝেমধ্যেই নতুন ফর্মুলা নিয়ে হাজির হয়। ক্ষমতায় আসতে হলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। বিদেশী প্রভুদের কাছে ধরনা দিয়ে লাভ নেই। আর আন্দোলনের দোহাই দিয়ে লাভ নেই। আওয়ামী লীগ রাজপথে থেকেই সব আন্দোলন করবে। দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতির কারণেই আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে।
চরকুমারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাইজুর রহমান মোল্যার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান আক্তার সরদারের সঞ্চালনে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সখিপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির মোল্যা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য জহির সিকদার, জেলার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক কাওসার আহমেদ তকি, থানার সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মানিক সরকার, সহসভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক মোল্যা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মানিক সরদার প্রমুখ।