গত দুদিনে অনেক কথাই শোনা গেছে ফুটবলে। একদিকে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নামে ‘বিদ্রোহী’ লিগ আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে ১২টি শীর্ষস্থানীয় ক্লাব। এমন বোমার আঘাতের জবাব দিতে দেরি করেনি ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ও ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (উয়েফা)। এরই মধ্যে উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দর সেফেরিন সুপার লিগে অংশ নেওয়া ১২ ক্লাবকে অর্থলোভী আখ্যা দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন সম্ভাব্য সব প্রতিযোগিতা থেকে তাদের নিষিদ্ধ করবেন।
সাধারণ ফুটবল দর্শকের মতও তা–ই। ফুটবলে আর্থিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ক্লাবগুলোকেই দেখা যাচ্ছে সুপার লিগে। এই ‘বিদ্রোহী’ লিগও বলছে বড় ক্লাবগুলোর মধ্যে নিয়মিত ম্যাচ হলে আয় বেশি করা সম্ভব, এ চিন্তা থেকেই লিগ আয়োজন করছে তারা। এভাবে বড় ক্লাবগুলোর আরও বেশি আয় করা আর ছোট ক্লাবগুলোকে আর্থিকভাবে বঞ্চিত করা মেনে নিতে পারছেন না কেউ। সেই সঙ্গে এত দিনের ঐতিহ্য চ্যাম্পিয়নস লিগের রং আচমকা হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাটাও সুপার লিগ নিয়ে বিরাগ সৃষ্টি করছে।
এমন অবস্থায় সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে এসেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ ও সুপার লিগের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পেরেজ ইঙ্গিত দিয়েছেন, উয়েফার আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ক্লাবগুলো আর্থিকভাবে ভুগছে। আর সে কারণেই উয়েফার নিয়ন্ত্রণের বাইরে একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চাইছেন তাঁরা।
ইউরোপিয়ান সুপার লিগের ধারণা নতুন কিছু নয়। ২০০৯ সালেই আর্সেনালের কিংবদন্তি কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার দাবি করেছিলেন, এমন কিছুর দেখা মিলবে এক দশকের মধ্যেই। কিন্তু পরিকল্পনাটা দানা বাধতে সময় নিয়েছে। ২০২১–এ এসে হঠাৎ এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের পেছনে করোনাভাইরাস মহামারিকেই কারণ দেখিয়েছেন রিয়াল সভাপতি।
কাল স্প্যানিশ টিভি অনুষ্ঠান এল চিরিঙ্গিতোতে এসে বলেছেন, ‘এই বাজে আর্থিক অবস্থার একটা সমাধান চাইছে স্পেন, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্লাব। এর একমাত্র সমাধান হলো আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলা। চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার বদলে সুপার লিগ খেললে হারানো আয়টা পুষিয়ে নিতে পারবে ক্লাবগুলো। রিয়াল মাদ্রিদ খুব বাজে অবস্থায় আছে। দুই মৌসুমে ৪০ কোটি ইউরোর বেশি ক্ষতি হয়েছে আমাদের, এটা শুধু রিয়াল মাদ্রিদেরই হিসাব। আমরা সবাই খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যখন অন্য কোনো আয়ের পথ থাকে না, একমাত্র উপায় হলো যত সম্ভব প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলা। সুপার লিগ ক্লাবগুলোকে আর্থিকভাবে বাঁচাবে।’
আর্থিক দিক চিন্তা করলে চ্যাম্পিয়নস লিগ ক্লাবগুলোর বড় আয়ের উৎস। ইউরোপের সেরা টুর্নামেন্ট খেললে বেশ ভালো আয় করতে পারে ক্লাবগুলো। মহামারির মধ্যে চলছে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ, তবু কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়া বায়ার্ন মিউনিখই আয় করেছে ১০ কোটি ইউরো। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে বায়ার্ন আরও ১৩ কোটি ইউরো পেয়েছিল। অর্থাৎ প্রতিবছরই এই টুর্নামেন্ট খেলে ভালোই আয় করছে ক্লাবগুলো। সঙ্গে যোগ হচ্ছে টিভিস্বত্বের ভাগও।