চট্টগ্রামের আকাশে উঠতে পারতো ঝলমলে রোদ। পূর্বাভাস অন্তত তেমনই ছিল। কিন্তু সেই আকাশেরই ‘ঈষাণ’ কোণে অপ্রত্যাশিত ‘কিষাণ’ ঝড়ের হানা। যে ঝড়ে টালমাটাল টাইগার বোলাররা। ভারতীয় ওপেনার ঈশাণ কিষাণের রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরির দিনে ২২৭ রানের বিশাল জয় নিয়ে ভারত এড়িয়েছে হোয়াইটওয়াশ। আর লজ্জাজনক এক হারে ধূলিসাৎ হলো বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত ধবল ধোলাইয়ের স্বপ্ন।
টস হেরে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়ানডে ম্যাচ টি-টোয়েন্টির মেজাজে শুরু করে ভারত। ৪০৯ রানের পাহাড় গড়ে। শুরুর তাণ্ডবলীলায় কিছুটা ভাটা না পড়লে আরও বড় লক্ষ্যমাত্রা দাঁড় করাতে পারতো ভারত। সেই ৪০৯ রানের পাহাড় টপকাতে গিয়ে ইশান কিষানের রানই তুলতে পারেনি বাংলাদেশের ১১ জন ব্যাটার। আসা যাওয়ার মিছিলে টাইগারেরা গুটিয়ে যায় মাত্র ১৮২ রানে। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বড় ব্যবধানের হার।
শনিবার শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন ভারতীয় ওপেনার ঈষাণ কিষাণ। বাংলাদেশ বোলারদের তুলোধুনা করে সবচেয়ে দ্রুতগতির ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন তিনি। ১২৬ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি! শেষ পর্যন্ত ১৩১ বলে ২১০ রানে থামে অনবদ্য এই ইনিংস। এই টর্নেডো ইনিংস তিনি সাজান ২৪টি চার ও ১০ ছক্কায়। এরপর শুরু হয় কোহলি ঝড়। বিশ্বসেরা এই ব্যাটার এদিন তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৭২তম সেঞ্চুরি। ৯১ বলে ১১ বাউন্ডারি ও ২ ওভার বাউন্ডারিতে তিনি করেন ১১৩ রান।
ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে আর কেউ তেমন বড় রানের দেখা পাননি। সাকিবের বলে বোল্ড হওয়ার আগে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৭ বলে ৩৭ রান করেন ওয়াশিংটন সুন্দর। এছাড়া ওপেনার শেখর ধাওয়ান ৮ বলে ৩, শ্রেয়াস লেয়ার ৬ বলে ৩ ও লোকেশ রাহুল ১০ বলে ৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন। পরে অক্ষর প্যাটেল ২০ এবং শার্দুল ঠাকুর ৩ রান যোগ করে আউট হন। কুলদীপ যাদব ও মোহাম্মদ সিরাজ যথাক্রমে ৩ ও ০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। এতে নির্ধারিত ৫০ ওভার খেলে ৮ উইকেট হারিয়ে ভারতীয় দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪০৯ রান।
ভারতের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সামনে এদিন টাইগার বোলারদের প্রত্যেকেই ছিলেন নিষ্প্রভ। ৯.৯০ ইকোনমিতে সবচেয়ে খরুচে বোলার ছিলেন তাসকিন আহমেদ। ৯ ওভারে ৮৯ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন ২ উইকেট। এছাড়া সাকিব আল হাসান ও এবাদত হোসেন ২টি করে উইকেট পেয়েছেন। ১ উইকেট করে পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
৪১০ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতীয় বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশি ব্যাটাররা। সাকিব আল হাসানের ৪৩ ছাড়া উল্লেখ করার মতো রান করতে পারেননি কেউই। ওপেনার এনামুল হক বিজয় তৃতীয় ম্যাচেও ব্যর্থ। দলীয় ৩১ রানের মাথায় অক্ষর প্যাটেলের বলে বড় শট খেলতে গেলে লং অনে ক্যাচ তুলে দেন সিরাজের হাতে। ফেরার আগে তিনি করেন ৭ বলে ৮ রান। আশা দেখিয়ে হতাশ করেন অধিনায়ক লিটন দাসও। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যখন ৪৭ তখন বিদায় নেন তিনি। সিরাজের শিকার হয়ে ফেরেন ২৬ বলে ২৯ রান করে। তিন নম্বরে সাকিব এসে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন; তবে বিপরীত প্রান্তে আসা যাওয়ার মিছিল অব্যাহত থাকে। চারে নামা মুশফিকুর রহিম ১৩ বলে ৭ রান করে বোল্ড হন অক্ষর প্যাটের বলে। টি-টোয়েন্টিকে তো বিদায় বলেছেন আগেই। ওয়ানডেতে দ্রুত ছন্দ খুঁজে না পেলে তার ’মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ তকমা যে বেশিদিন টিকবে না সেটি না বললেও চলছে। ইয়াছির আলী এসে সাকিবকে কিছুটা সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে দলীয় ১০৭ রানের মাথায় উমরান মালিকের এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনিও।
আগের ম্যাচ জয়ের অন্যতম নায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যখন নামলেন তখন জয়ের আশা বাদ দিয়ে লজ্জা এড়ানোর পুঁজি খুঁজছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবার বিদায় নিলেন সাকিব নিজেই। কুলদীপ যাদবের শিকার হয়ে দলীয় ১২৪ রানের মাথায়, দলের সর্বোচ্চ ও নিজের ব্যক্তিগত ৪৩ রানের মাথায় ফিরে যান এই অলরাউন্ডার। এরপর ২৬ বলে ২০ রান করে ওয়াশিংটন সুন্দরের ডেলিভারিতে লেগ বিফোরের হয়ে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ যথাক্রমে ৮ ও ৩ রান করে শার্দুল ঠাকুরের শিকারে পরিণত হন। এবাদত শূন্যহাতে ফেরার পর মোস্তাফিজকে সাথে নিয়ে স্কোরবোর্ডে ৩০ রান যোগ করেন আত্মবিশ্বাসী তাসকিন আহমেদ। দুই ছয় ও এক চারে তিনি করেন ১৭ রান। পরে মোস্তাফিজ ব্যক্তিগত ১৩ রানে আউট হলে বাংলাদেশ থামে ১৮২ রানে। এতে ২২৭ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ভারত।
ম্যাচে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন শার্দুল ঠাকুর। ২টি করে উইকেট পান অক্ষর প্যাটেল ও উমরান মালিক। এছাড়া মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব ও ওয়াশিংটন সুন্দর পেয়েছেন ১টি করে উইকেট।
২১০ রানের অতিমানবীয় ইনিংসে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ইশান কিষান। প্রথম দুই ম্যাচের জয়ের নায়ক মেহেদী মিরাজ হয়েছেন প্লেয়ার অব দ্যা সিরিজ। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো সিরিজ সেরার পুরষ্কার পাওয়ার গৌরব অর্জন করলেন মিরাজ।