‘আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে’

হবিগঞ্জ-৪ আসন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এখানে টানা ৩৩ বছর নৌকার সামনে দাঁড়াতেই পারেননি অন্য কোনো প্রার্থী। তবে এবার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো সাড়া ফেলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসবমুখর ভোটদান দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ঈগল প্রতীকের এই প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি চুনারুঘাট-মাধবপুরবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা উপেক্ষা করে গতকাল রোববার সকাল ৮টায় চুনারুঘাটের হাজী ইয়াছিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। একই কেন্দ্রে ভোট দেন তাঁর মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। এর আগে সকাল পৌনে ৮টায় বাবার কবর জিয়ারত করে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট চলে। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা। নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য। যে কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এ আসনে।
হবিগঞ্জ-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আট প্রার্থী। তারা হলেন– আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন (ঈগল), জাতীয় পার্টির আহাদ উদ্দিন চৌধুরী (লাঙ্গল), সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রাশেদুল ইসলাম খোকন (ছড়ি), ইসলামী ঐক্যজোটের আবু সালেহ (মিনার), ইসলামিক ফ্রন্টের মোহাম্মদ আব্দুল মমিন (চেয়ার), বিএনএমের মোখলেছুর রহমান (নোঙ্গর) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আল আমিন (ডাব)।

জানা গেছে, হবিগঞ্জ-৪ আসনে টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদ। এর পর টানা দুইবার সংসদ সদস্য হন অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। এ আসনের ২৪টি চা বাগানে নৌকার বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। যে কারণে টানা ৩৩ বছর ধরে নৌকার সামনে দাঁড়াতেই পারেননি অন্য কোনো প্রার্থী।
তবে চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এবার ভিন্ন চিত্রের আভাস পাওয়া গেছে। চুনারুঘাটের অনেক চা শ্রমিক এবার পরিবর্তন চান। সৎ মানুষ ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে ব্যারিস্টার সুমনকে ভোটাররা বেছে নেবেন বলে জানান তারা।
স্থানীয়দের মতে, কর্মগুণে অল্প দিনেই আলোচনায় এসেছেন ব্যারিস্টার সুমন। এলাকায় ৪৯টি সেতু-সাঁকো নির্মাণ, বন্যা ও মহামারিতে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, ফুটবল একাডেমি গঠন এবং আঞ্চলিক ভাষায় শ্রুতিমধুর বক্তব্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে চুনারুঘাট উপজেরার আব্দুর রাজ্জাক রাজুর ভাষ্য, ব্যারিস্টার সুমন জনপ্রতিনিধি না হয়েও যেভাবে মানুষের পাশে রয়েছেন, ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এর প্রতিফলন ঘটাবে।
মাধবপুরের ভোটার শেখ বশির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের আসনের বর্তমান এমপি সাধারণ মানুষের খোঁজখবর রাখেননি। তিনি দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে রাখেননি তেমন কোনো যোগাযোগ। অন্যদিকে ব্যারিস্টার সুমন আপদে-বিপদে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। যে কারণে সুমন চুনারুঘাটবাসীর মতো মাধবপুরবাসীর কাছেও অতিপ্রিয়।’