ডায়াবেটিসের একটি মারাত্মক জটিলতা হলো ডায়াবেটিক কিটো-অ্যাসিডোসিস। যখন রক্তে চিনির মাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়, তখন এই জটিলতা তৈরি হতে পারে। সাধারণত টাইপ-১ ডায়াবেটিসে এই জটিলতা সবচেয়ে বেশি হয়। কিন্তু টাইপ-২ ডায়াবেটিসেও ক্ষেত্রবিশেষে এমন জটিলতা তৈরি হতে পারে।
এমনটি হলে রোগীর তৃষ্ণা বেড়ে যায়। মূত্র নিঃসরণ অনেক বৃদ্ধি পায়। পায়ে চাবানো-কামড়ানো ব্যথা, পেটে ব্যথা, অরুচি, বমি, প্রচণ্ড ক্লান্তি, ঝাপসা দৃষ্টি এসে ভর করে। পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়, রোগীর রক্তচাপ কমে যায়, তাপমাত্রা কমে যায়, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। রোগীর শরীরে লবণ কমে যায়। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। কথাবার্তা হয়ে পড়ে অসংলগ্ন। এক সময় রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। বয়স্কদের এ রোগে মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ।
ইনসুলিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তে চিনির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ফলে দেহ-কোষে চিনি প্রবেশ করতে পারে না। তখন দেহ-কোষের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করার জন্য দেহের চর্বি এবং আমিষ ভাঙতে শুরু করে। তৈরি হয় কিটো এসিড। দেহের জন্য এই এসিডীয় বা অম্লীয় পরিবেশ মোটেও সুখকর নয়।
দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। যে কোনো ধরনের ইনফেকশন, শল্যচিকিৎসা, শারীরিক ও মানসিক অভিঘাত, গর্ভাবস্থায় এমন জটিলতা সৃষ্টির পেছনে ঝুঁকি হিসেবে কাজ করে।
রোগীর ডায়াবেটিস অনেক বেড়ে গেলে এবং উপরোক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। দেহে গ্লুকোজ এবং অম্লের আধিক্যের পাশাপাশি প্রস্রাব কিংবা রক্তে কিটোন বডির উপস্থিতি থাকলে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হবে, রোগী ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিসে আক্রান্ত।
এটি প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যাপিত জীবনে শৃঙ্খলা আনা, ওষুধ সেবন এবং নিয়মিত গ্লুকোজ পরখ করে ডায়াবেটিস বাগে রাখতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে ডায়াবেটিস যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
এটি হচ্ছে একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। এমনটি হলে নিবিড় তত্ত্বাবধান কেন্দ্রে রোগীর চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
রোগীর পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি পটাশিয়াম জাতীয় লবণশূন্যতা দূর করার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। শিরাপথে ইনসুলিন দিতে হবে। রোগীর ইনফেকশন দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের দ্বারস্থ হতে হবে। উন্নত দেশেও এই রোগে হাসপাতালে মৃত্যুর হার ১০ শতাংশ।
Author: মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট সিএমএইচ, ঢাকা।