‘নিপীড়িতের কণ্ঠস্বর’ বব মার্লের জন্মদিন আজ

তিনি গাইতেন নিপীড়িত মানুষের জন্য, অধিকারের জন্য। অবহেলিত মানুষের জন্য তার লেখা, সুর আর কণ্ঠ ছিল সদা জাগ্রত। তিনি বব মার্লে; জ্যামাইকান শিল্পী, গিটারিস্ট ও গীতিকার। কিংবদন্তি এ সঙ্গীত ব্যক্তিত্বের জন্মদিন আজ।

১৯৪৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সেইন্ট অ্যানের নাইন মাইলের বস্তিতে জন্ম ববের। জ্যামাইকার অবহেলিত মানুষের অধিকার নিয়ে গান গাওয়ায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জ্যামাইকানদের প্রিয় মানুষে পরিণত হন বব, মন জয় করেন তরুণ প্রজন্মের। তিনি ছিলেন তৃতীয় বিশ্ব থেকে উঠে আসা প্রথম সুপারস্টার।

স্কুলে পড়ার সময় মাত্র ১৮ বছর বয়সে সহপাঠীদের নিয়েই তৈরি করেছিলেন ‘বব মার্লে অ্যান্ড দ্য ওয়াইলার্স’ নামের ব্যান্ড। পরবর্তীতে যা সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ দলের সদস্য ছিলেন বব মার্লে, পিটার টশ ও বানি ওয়েইলারসহ আরও কয়েকজন।

‘বব মার্লে অ্যান্ড দ্য ওয়াইলার্স’

মার্লে ও তার ব্যান্ড ‘ওয়েলার্স’ ১৯৭৪ সালে ‘বার্নিন’ নামে যে অ্যালবামটি নিয়ে আসে তাতে ছিল বিখ্যাত গান ‘গেট আপ অ্যান্ড স্ট্যান্ড আপ’। ষাট ও সত্তরের দশকে দেশে দেশে উত্তাল জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনে বিদ্রোহী মানুষের বুকে সাহস জুগিয়েছে এ গান।

এরপর কখনও ব্যান্ডের হয়ে আবার কখনও এককভাবেই গানের অ্যালবাম বের করেছেন। ‘বাফেলো সোলজার’, ‘নো ওম্যান নো ক্রাই’, ‘ব্ল্যাক প্রগ্রেস’-এর মতো অনেক ভুবন কাঁপানো গান তার অনবদ্য সৃষ্টি।

ববের বেড়ে উঠেছিলেন জ্যামাইকার শোষিত শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাজে। এ মানুষগুলো পুঁজিবাদ-বর্ণবাদের কারণেই শোষিত হতো। মার্লের সংগীতে সে বিষয়টিই বারবার উঠে এসেছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের মনে ভালোবাসা ও গান প্রবেশ করাতে পারলেই ঘৃণা থেকে মুক্তি মিলবে। এ বিশ্বাসের কারণে নিজের পুরো ক্যারিয়ারেই যুক্ত ছিলেন ‘রাসতাফারি’ আন্দোলনের সঙ্গে।

বব মার্লের একটি বিখ্যাত উক্তি।

জ্যামাইকার রাজনৈতিক সংঘাত মেটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। শান্তির জন্য জ্যামাইকাসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে অনেক কনসার্টে গান গেয়েছেন বব মার্লে। ১৯৯৯ সালে তার ‘বব মার্লে এন্ড দ্য ওয়েইলার্স’ অ্যালবামকে বিশ শতকের সেরা অ্যালবাম হিসেবে ঘোষণা করে টাইম ম্যাগাজিন। এছাড়া, ১৯৯৪ সালে রক অ্যান্ড হল অব ফেম: রোলিং স্টোন-এ সর্বকালের সেরা ১০০ শিল্পীর তালিকায় ১১তম স্থান লাভ করেন বব মার্লে।

তবে খুব বেশি দিন মানবতার জয়গান গাইতে পারেননি বব মার্লে। ক্যানসারের সাথে লড়াই করে মাত্র ৩৬ বছর বয়সেই বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে যান তিনি। মৃত্যুর ৪২ বছর পরেও তার জনপ্রিয়তা কমেনি একটুও।