Inflationary pressures are driving up government borrowing costs

বাংলাদেশে করোনা-পরবর্তী সময়ে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। সরকারের ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা ভারত, চীনসহ উদীয়মান এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বেশি। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে সরকারি ঋণের সুদহার বেড়েছে। এর প্রধান কারণ মূল্যস্ম্ফীতির চাপ। অন্যান্য দেশেও একই পরিস্থিতি।

গতকাল শুক্রবার সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ওপর আইএমএফের ‘রিজিওনাল ইকোনমিক আউটলুক’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এমন তথ্য রয়েছে। আইএমএফের এ প্রতিবেদন এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন সংস্থাটির একটি মিশন বাংলাদেশের প্রস্তাবিত সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের ওপর আলোচনা করতে ঢাকায় অবস্থান করছে। মিশনটি এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংকের সুদহারে আরোপিত সীমা প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছে। আগামীকাল রোববার তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আবারও বৈঠক করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে তাদের। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদহার ৮ শতাংশের নিচে ছিল। আর করোনার সময় সুদহার ছিল ৬ শতাংশের নিচে। ভারতে একই মেয়াদের বন্ডের সুদহার ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে। চীনে এ হার ৩ শতাংশেরও কম। প্রতিবেদনের ছকে উল্লেখিত উদীয়মান এশিয়ার অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের তুলনায় এর সুদহার কম রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে বেঁধে দেয়। পরে আমানতের সুদহারেও এক ধরনের সীমা আরোপ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় জানায়, আমানতের সুদহার পূর্ববর্তী তিন মাসের গড় মূল্যস্ম্ফীতির চেয়ে কম হবে না। তখন মূল্যস্ম্ফীতি অবশ্য ৬ শতাংশের কম ছিল। কিন্তু এখন পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ম্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে এবং আইএমএফ গত ১১ অক্টোবর প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ম্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি থাকবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক তার নীতি সুদহারও গত সেপ্টেম্বর মাসে বাড়িয়েছে। ফলে বাজারে সুদহার বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী চাপ রয়েছে। তবে ঋণের সুদে সরাসরি ৯ শতাংশের সীমা আরোপ থাকায় ব্যাংকগুলো বাড়াতে পারছে না। অবশ্য বাস্তবতার কারণে মূল্যস্ম্ফীতির সঙ্গে আমানতের সুদহার সমন্বয়ের নির্দেশনা মানতে পারছে না বেশিরভাগ ব্যাংক। এ অবস্থায় আইএমএফ সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

মতামত জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, তারল্য সংকট এবং সরকারের ঋণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়েছে। তবে সাধারণ পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলো যে হারে ঋণ দেয়, সরকারি ঋণের সুদহার তার চেয়ে কম হওয়ার কথা। কারণ সরকারকে ঋণ দিলে তা ঝুঁকিমুক্ত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, দুটোই একেবারে কাছাকাছি। তার মতে, সুদের হারে সীমা আরোপ করায় পুরো বাজার উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। বাজার ঠিক মতো কাজ করছে না। তিনি মনে করেন, সুদহার বাড়ার কারণে সরকারের ঋণ পরিশোধের ব্যয় বাড়বে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতি থাকলে এ অবস্থা হবে। এ কারণে মূল্যস্ম্ফীতি কমানোই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হতে হবে।

অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট মাসে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত আগস্টে যা দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। ৫ বছর, ১৫ বছর এবং ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহারও একইভাবে বেড়েছে। স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহারও বেড়েছে।

আইএমএফের ঋণ বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াবে: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতি সামলাতে আইএমফের কাছ থেকে আগেভাগে ঋণ চেয়েছে। এ ঋণ দেশের বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে। আইএমএফের ঋণ ভবিষ্যৎ অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াবে।

এতে আরও বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধ করোনার প্রভাব থেকে বাংলাদেশের পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত করেছে এবং বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান সংকটের তিনটি কারণ রয়েছে। এগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে চাহিদার পতন, আর্থিক পরিস্থিতি অর্থাৎ সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে সুদের হার বৃদ্ধি এবং চীনের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নিম্নগতি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রথম দুটি বেশি করে প্রযোজ্য।

এশিয়ার পরিস্থিতি: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ায় ২০২২ এবং ২০২৩ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে। এর কারণ বৈশ্বিকভাবে আর্থিক সংকোচন, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীনের অর্থনীতিতে দ্রুত ও অস্বাভাবিক নিম্নগতি। যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়ায় এশিয়ার দেশগুলোতে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এ ছাড়া এশিয়া থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডলার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিনিয়োগের জন্য ঢুকেছে। এর ফলে মূল্যস্ম্ফীতির ওপর চাপ বেড়েছে। গত বছর এশিয়ায় মূল্যস্ম্ফীতি পরিমিতভাবে বাড়ছিল। কিন্তু এর গতি বেড়ে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। সার্বিকভাবে মুদ্রানীতি সংকোচনের পরামর্শ দিলেও আইএমএফ দেশের পরিস্থিতি বুঝে কার্যকর নীতি গ্রহণের কথাও বলেছে। সংস্থাটি মনে করে, সব দেশের ক্ষেত্রে একই রকম নীতি কাজ করবে না।