টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান কতটা অপ্রতিরোধ্য দলে পরিণত হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোঁচট খাওয়ার আগ পর্যন্ত সবাই ধরে নিয়েছিল তারাই চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছে। এবারের এশিয়া কাপে অবশ্য শাহিন আফ্রিদি, ইমাদ ওয়াসিম, শোয়েব মালিক, হাসান আলিদের অনুপস্থিতিতে সে পূর্ণ শক্তির দল পাচ্ছেন না বাববর আজমরা। তবে একাধিক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের অনুপস্থিতিতেও একটা জায়গায় বেশ অপ্রতিরোধ্য পাকিস্তান। যেখানে রোধ করা না গেলে, তাদের হারানো প্রায় অসম্ভব। চলুন জেনে নেয়া যাক, এশিয়া কাপের লড়াইয়ে নামতে যাওয়া বাবর বাহিনীর শক্তি ও দুর্বলতা কোথায়? আর কোথায়ই বা তারা অপ্রতিরোধ্য?
এবারের এশিয়া কাপে প্রায় প্রত্যেকটি দলই ইনজুরিতে জর্জরিত। দলের সেরা কিছু ক্রিকেটার না থাকার পরও ভারত ও পাকিস্তানকে হট ফেবারিটের তালিকা থেকে বাদ দেয়া যাচ্ছে না। দুই দলের মধ্যে যদি কোনো নির্দিষ্ট একটি দলকে এগিয়ে রাখতে হয়, আপনি কাকে তালিকার প্রথমে রাখবেন?
পরিসংখ্যানের হিসাবে অবশ্যই ভারত এগিয়ে থাকবে। কারণ এ সংস্করণে দুই দলের মধ্যে ৯ বারের দেখায় ৭ বারই জিতেছে ভারত। কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে তো সবার শক্তিমত্তা হিসাব করা যায় না। এশিয়া কাপের বাছাইপর্ব থেকে উঠে আসা দল হংকং পরিসংখ্যানের হিসেবে বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে। টি-টোয়েন্টিতে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে দুই দলের একমাত্র দেখায় হেরেছিল টাইগাররা। পরিসংখ্যানের হিসেবে ২০০৭ থেকে ২০১৬ সালে ভারতের বিপক্ষে ৮ ম্যাচের মধ্যে ৭ ম্যাচেই হেরেছে পাকিস্তান। কিন্তু ২০২১ সালের বিশ্বকাপে বাবররা জিতেছিল ভারতকে একেবারে নাস্তানাবুদ করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্টেডিয়ামে কোহলিরা সে ম্যাচে হেরেছে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। ভারত মূলত হেরেছে পাকিস্তানের টপ অর্ডারের বিপক্ষে। জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি ও ভুবনেশ্বর কুমারের মতো তাদের অভিজ্ঞ ও সেরা মানের বোলাররাও পারেননি দুই পাক ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমকে সাজঘরে ফেরাতে। পাকিস্তান দল অপ্রতিরোধ্য এই টপ অর্ডারেই। এটা অনেকটা চীনের প্রাচীরের মতো। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে ফখর জামান। এদের সময়মতো সাজঘরে ফেরানো না গেলে প্রতিপক্ষ ওইদিনের ম্যাচে আর মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে না এটা যেন শাশ্বত সত্য।
শেষ ১৩ টি-টোয়েন্টির মধ্যে পাকিস্তানের জয় ১১টিতেই। এই জয়গুলোতে ব্যাটিংয়ে দলের টপ পারফর্মার ছিলেন বাবর, রিজওয়ান ও ফখর। যে দুই ম্যাচ হেরেছে তাতেও পারফর্মার ছিলেন এ তিন জনই। এ তিন জনের বাইরে মিডল অর্ডারে ২-৩ ওভারে ২৫-৩৫ রান তোলার জন্য আসিফ আলি তো আছেনই। যিনি কি না এশিয়া কাপের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের অনুশীলন সেরেছেন। মিডল অর্ডারে আরেক ব্যাটার হায়দার আলিও নিজের দিনে বেশ বিধ্বংসী।
বোলিংয়ে শাহিন আফ্রিদির মতো বিধ্বংসী বোলার না থাকলেও, শাদাব খান ও হারিস রউফের মতো টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট বোলাররা আছেন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য। তাদের সঙ্গে আক্রমণের নতুন হাতিয়ার হতে পারে নাসিম শাহ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখনও অভিষেক না হলেও পিএসএল, সিপিএল ও দ্য হান্ড্রেডের মতো জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর অভিজ্ঞতা তাকে দৌড় থেকে পিছিয়ে রাখছে না।
এতকিছুর মধ্যেও পাকিস্তানের দুর্বলতা থেকেই যাচ্ছে। কারণ ভারতের বিপক্ষে গত বিশ্বকাপের পাকিস্তানের যে দুর্দান্ত জয়, সেটার সূচনা করেছিল শাহিন আফ্রিদিই। ভারতের তিন টপ অর্ডার ব্যাটার লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে সাজঘরে ফিরিয়ে পাকিস্তানের জয়ের ভিতটা প্রথমে তিনিই গড়ে দিয়েছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে বোলিং বিভাগে তাই ভালোই ভুগতে হবে বাবরদের। তার ওপর চীনের মহাপ্রাচীর খ্যাত টপ অর্ডার একবার ভাঙলে, প্রতিপক্ষের বোলারদের জন্য অনভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ও লো অর্ডার ভেঙে পুরো প্রাচীর ধ্বসিয়ে দেয়াই সহজ হয়ে যাবে। সবকিছু চাপিয়ে গ্রুপপর্বে পাকিস্তান ভারতের বিপক্ষে হারলেও, হংকংকে হারিয়ে পৌঁছে যেতে পারবে সুপার ফোরে। কিন্তু সুপার ফোরে দলের পিলার বাবর-রিজওয়ান ব্যর্থ হলে শিরোপা জেতা হবে না পাকিস্তানের।
প্রসঙ্গত, আইসিসির বর্তমান টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে পাকিস্তানের তুলনায় এশিয়া কাপে একমাত্র এগিয়ে থাকা দল ভারত। বাকিদের অবস্থান বেশ দূরে। তাই পাকিস্তানের শক্তি-দুর্বলতায় ভারতের সঙ্গে বিশ্লেষণ করেই উপস্থাপন করা হয়েছে এ প্রতিবেদন। র্যাঙ্কিংয়ের বাইরে পরিসংখ্যানেও ভারত ছাড়া বাকিদের তুলনায় বেশ এগিয়ে আছেন বাবররা। এশিয়া কাপে অংশ নেয়া বাকি চার দল- বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও হংকং।
বাবরের নেতৃত্বে পাকিস্তান স্কোয়াড:
Babar Azam (captain), Shadab Khan, Asif Ali, Fakhar Zaman, Haider Ali, Haris Rauf, Iftikhar Ahmed, Khushdil Shah, Mohammad Nawaz, Mohammad Rizwan, Mohammad Wasim Jr., Naseem Shah, Shahnewaz Dhani, Usman Qadir, Mohammad Hasnain.




