ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ প্রধান প্রধান শহরে হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেন শুধু সুইডেন ও অস্ট্রিয়ার মতো নিরপেক্ষতা বজায় রাখলেই যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে ইউক্রেন। তাই দৃশ্যত কূটনৈতিক সমাধান ব্যর্থ হতে চলেছে।
ইউক্রেনের উত্তরের শহর চেরনিহিভে রুশ সেনাদের গুলিতে ১০ জন নিহত হয়েছে। তারা সবাই রুটির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। ইউক্রেনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে এক টুইট বার্তার মাধ্যমে এ খবর জানানো হয়। মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে ওই টুইটে লেখা হয়, ‘এ ধরনের আক্রমণ বন্ধ হওয়া উচিত। আমরা ইউক্রেনে সব ধরনের নৃশংসতাজনিত অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিতে সব বিকল্প বিবেচনা করছি। ’
এদিকে বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান ‘সফল’ হয়েছে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার মুখেও রাশিয়ায় বেতন ও পেনশন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
মার্কিন সিনেট গত মঙ্গলবার সর্বসম্মতভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যাকে দেশটির রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভক্ত কংগ্রেসের জন্য বিরল ঘটনাই বলা চলে।
এদিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আক্রমণ বাড়িয়েছে রুশ বাহিনী। বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে কিয়েভের কেন্দ্রস্থল। গোলাবর্ষণে দুটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত হয় অন্তত দুজন। এখন ৩৫ ঘণ্টার কারফিউ চলছে গোটা কিয়েভজুড়ে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত চলবে ওই কারফিউ। রুশ বাহিনীর হামলার মুখে এ কারফিউয়ের ঘোষণা দেন শহরটির মেয়র ভিতালি ক্লিটশকো।
ক্লিটশকো বলেন, ‘বিশেষ অনুমতি ব্যতীত শেল্টারে যাওয়া ছাড়া শহরে ঘোরাফেরা করা নিষিদ্ধ। রাজধানী কিয়েভ ইউক্রেনের প্রাণ, এবং এটি রক্ষা করা হবে। কিয়েভ, বর্তমানে ইউরোপের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার প্রতীক এবং সম্মুখভাগের পরিচালনা ঘাঁটি, আমরা এর হাল ছাড়ব না। ’
দক্ষিণের শহর ঝাপোরিজিয়ায়ও চলছে রাশিয়ার আক্রমণ। অবরুদ্ধ বন্দরনগরী মারিওপোল থেকে পালিয়ে শহরটিতে আশ্রয় নিয়েছে হাজারো মানুষ। রেলওয়ে স্টেশনে আক্রমণ হয়েছে, কিন্তু কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
পাঁচ সাংবাদিক নিহত
কিয়েভের কাছে এক সংঘর্ষে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের ফ্রেঞ্চ-আইরিশ ক্যামেরাম্যান ও টিভি নেটওয়ার্কটির হয়ে কাজ করা এক ইউক্রেনীয় প্রযোজক মারা গেছেন। এ ছাড়া আরো দুই ইউক্রেনীয় সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা প্রাণ হারিয়েছেন।
অবরুদ্ধ শহর ত্যাগ
রুশ বাহিনীর সঙ্গে সম্মত মানবিক করিডরের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার মানুষ অবরুদ্ধ বন্দরনগরী মারিওপোল ত্যাগ করেছে।
শরণার্থী তিন লাখেরও বেশি
জাতিসংঘের সংস্থা ‘আইওএম’-এর দেওয়া তথ্যানুসারে, আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে তিন লাখেরও বেশি মানুষ ইউক্রেন থেকে পালিয়েছে। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা বলছে, এর অর্ধেকই অপ্রাপ্তবয়স্ক।
মার্কিন কংগ্রেসে জেলেনস্কির ভাষণ
মার্কিন কংগ্রেসে বক্তব্য দেন জেলেনস্কি। আবারও ‘নো ফ্লাই জোন’-এর আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি রাশিয়ার ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলেন। বক্তব্য শুরুর আগে তাঁকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো হয়।
জনসন : ন্যাটোতে নয় এখনই
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, ইউক্রেন ‘কোনোভাবেই ন্যাটোতে শিগগিরই যোগ দিতে পারবে না’। তবে এ সিদ্ধান্ত দেশটির প্রেসিডেন্টের নিতে হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
ন্যাটো শান্তি মিশনের আহ্বান
পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক ও স্লোভেনিয়ার তিন প্রধানমন্ত্রী অবরুদ্ধ কিয়েভে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় কিয়েভের সহায়তায় ন্যাটো শান্তি মিশনের আহ্বান জানায় ওয়ারশ।