লাইন দীর্ঘ হচ্ছে, কম মানুষ পণ্য পাচ্ছে

দীর্ঘদিন ধরেই চলছে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা। গত সপ্তাহ থেকে আরো বাড়ল চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও আদা-রসুনের দাম। এ অবস্থায় সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লাইন আরো দীর্ঘ হচ্ছে টিসিবির ট্রাকের পেছনে। তবে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।

দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্যের মজুদ শেষ হওয়ায় অনেকে ফিরেছেন খালি হাতে। প্রতিনিয়ত ঘটছে মারামারিও।

গতকাল মঙ্গলবার প্রতিটি ট্রাকে ৫০০ লিটার সয়াবিন তেল, চিনি ৬৫০ কেজি, ডাল ৬০০ কেজি ও পেঁয়াজ ৪৫০ কেজি দেওয়া হয় বিক্রির জন্য।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পোস্তগোলা শ্যামপুর বাজারের বরইতলায় ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবির ডিলার মেসার্স এসএস এন্টারপ্রাইজ। প্রতি লিটার তেল ১১০ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা ও পেঁয়াজ ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছে। দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, ক্রেতারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির এই চারটি পণ্য কিনছে।

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লাইনে দাঁড়াইছি। ট্রাক আসছে সকাল ১১টার পর। এখনো লাইনেই আছি। ট্রাক আসার দুই-তিন ঘণ্টা আগে এসে লাইনে দাঁড়াইলেও মাল পাব কি না চিন্তায় থাকতে হয়। যেহেতু এখন মানুষের চাপ অনেক বেড়েছে, তাই সরকারের উচিত এক ট্রাকের পরিবর্তে একই স্থানে দুটি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা। তাহলে আমাদের মতো মানুষ স্বস্তিতে পণ্য কিনতে পারবে। ’

এই ট্রাকের বিক্রিয়কর্মী মো. রাজা  বলেন, ‘ট্রাকে মাল ভরে জায়গায় আসতে আসতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। প্রতিদিন ট্রাকে প্রায় ২৫০ জনকে  মাল দেওয়া হয়। কিন্তু লাইনে মানুষ থাকে ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বেশি। ’

রামপুরা বাজার এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য নিতে আসা মো. রাশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এখানে কম দামে পণ্য পাওয়া যায়, সে জন্য সকাল থেকে এই রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। তবে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অর্ধেক মানুষও মাল পাবে না। তার আগেই মাল শেষ হয়ে যাবে। ’

পণ্য পাবেন না জেনেও লাইনের শেষে দাঁড়িয়ে আছেন হাজেরা খাতুন নামের এক মধ্য বয়সী নারী। তিনি বলেন, ‘আজ অন্য একটি কাজের জন্য দেরি হয়ে গেছে। আসলাম যেহেতু তাই লাইনে দাঁড়িয়েছি। যদি পাই। ’

টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে এসে বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছে অনেকেই। গতকাল মালিবাগ রেলগেটের কাছে তিন নারী প্রথমে ধাক্কাধাক্কি ও পরে হাতাহাতিতে জড়ান। এক পর্যায়ে জাহানারা বেগন নামের একজনের মাথা ফেটে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হয় বিক্রয়কর্মীদের।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত চার শ মানুষের হৈচৈ। সামনে যেতেই দেখা গেল দুই নারীর পণ্যের ব্যাগ নিয়ে কাড়াকাড়ি। মাহমুদা আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘আমি সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়াইছি। ১১টার দিকে গাড়ি আসে। অনেকক্ষণ দাঁড়ানোর পর যখন দেওয়া শুরু হইছিল তখন ওই মহিলা আইসা সিরিয়াল ছাড়া নিয়া যাইতাছিল। এই জন্যে তারে বলছি ব্যাগ নিয়ে যাইতে দিমু না। ’

জানতে চাইলে টিসিবির ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজকে (গতকাল) রাজধানীর ভেতরে ১৫০টি ট্রাকে দুই হাজার ২০০ কেজি পণ্য দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ মার্চ থেকে ‘ফ্যামিলি কার্ডে’ সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী এক কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ’