যুদ্ধ তাদের আলাদা করেছে, একত্রিত করলো জুডো

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বিশ্বের অন্যতম বড় শরণার্থী সংকট সৃষ্টি করেছে। সান্ডা আলডাস ও মুনা ডাহুক নামে দেশটির দুই নারী জুডো অ্যাথলেট এবার টোকিং অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন। তবে সিরিয়ার নয়, বরং অলিম্পিক শরণার্থী দলের হয়ে। সেখানে তারা প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জুডো মিক্সড টিম ইভেন্টে খেলবেন। তবে তাদের এই পর্যন্ত আসার পথ অতটা সহজ ছিল না।

 

ছোটবেলায় বাস্কেটবল খেলতেন সান্ডা আলডাস। একটি দলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। জানান, একদিন পাশেই একটি জুডো প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয় এবং সেটির শব্দ তাকে আকৃষ্ট করে। এরপরই পরিবারকে জুডো খেলতে চান বলে জানান। তখন সান্দার সাত বছর বয়স ছিল।

 

অন্যদিকে, মুনা ডাহুক ছয় বছর বয়স থেকেই জুডোর প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। তার বাবা একজন জুডো কোচ। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকেই দু’জনের (সান্ডা ও মুনা) মধ্যে বন্ধুত্ব শুরু হয়। তারা সম্পর্কে কাজিনও। কিন্তু পরবর্তীতে যুদ্ধ তাদের আলাদা করে দেয়। এখন সেই জুডো তাদের আবারও একত্রিত করেছে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই গল্পই শোনালেন এই দুই নারী অ্যাথলেট।

২০১৫ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে পালিয়ে যান সান্ডা আলডাস। সে সময় তার স্বামী ফাদি দারউইস জুডোর জাতীয় কোচ ছিলেন। তিনিও সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে পালানোর পরিকল্পনা করছিলেন।

 

যুদ্ধ তাদের আলাদা করেছে, একত্রিত করলো জুডোসান্ডা আলডাস বলেন, তিনি দামেস্ক থেকে পালিয়ে অন্যদের মতো সমুদ্র পথে তুরস্ক হয়ে নেদারল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানকার একটি শরণার্থী ক্যাম্পে নয় মাস বসবাস করেছেন। তবে সেখানে প্রশিক্ষণের জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। তাই শরীর ঠিক রাখার জন্য কেবল দৌঁড়াতেন।

এর সাত মাস পর একটি পারিবারিক পুণর্মিলন অনুষ্ঠানে স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে তার দেখা হয়। তবে ফাদি দারউইসের আসাটাকে অন্যরা ভালোভাবে নেয়নি। তিনি জানান, আমাকে ভালোভাবে গ্রহণ না করার কারণ, প্রথমত আমি সিরিয়ান ও দ্বিতীয়ত একজন শরণার্থী।

২০১৮ সালে সিরিয়া থেকে পালিয়ে নেদারল্যান্ডে পৌঁছান মুনা ডাহুক। সেখানেই দু’জনের পুনরায় মিলন হয়। এরপর ২০১৯ সালে শরণার্থী অ্যাথলেটদের একটি প্রোগ্রামে অংশ নিতে তাদের তিনজনকেই ডাকে আন্তর্জাতিক জুডো ফেডারেশন।

মুনা বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব সিরিয়া থেকে শুরু হয়। পরে যুদ্ধের কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে জুডো আমাদের আবারও একত্রিত করেছে এবং সুন্দর মুহূর্তগুলো ফিরিয়ে এনেছে।

 

সান্ডা বলেন, শরণার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত। তাই তাদের বার্তা পাঠাতে চাই যে, শরণার্থীদের আশা ছাড়তে নেই। রাস্তা হয়তো লম্বা এবং অনেক কঠিন; তবুও শেষ পর্যন্ত আপনি সেখানে পৌঁছাতে পারবেন।

 

 

 

যুদ্ধ তাদের আলাদা করেছে, একত্রিত করলো জুডো