দেশীয় প্রজাতির মধ্যে কই মাছ জনপ্রিয়। কই মাছ কম চর্বিযুক্ত এবং পুষ্টিকর হওয়ার কারণে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই মাছটি জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যাওয়ার কারণে মাছের বাজারে এই কই মাছের দাম তুলনামূলক একটু বেশি। অতীতে কই মাছ ডোবা-পুকুর, খালবিল, হাওর-বাঁওড় এবং প্লাবনভূমিতে অধিক পরিমাণে পাওয়া যেত। বর্তমানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সেচের জন্য বাঁধ নির্মাণ, শিল্পকারখানার বর্জ্য, পানিদূষণ, নির্বিচারে মাছ আহরণের ফলে, প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট, ফসলি জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাছে রোগবালাই বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে কই মাছের প্রাচুর্যতা কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি খালবিল, নদীনালা, প্লাবন ভূমি ও মোহনায় প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে কই মাছ বিলুপ্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অত্যন্ত মূল্যবান দেশীয় প্রজাতির এ মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে কই মাছের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা সফলভাবে উদ্ভাবন করেছেন। এর ফলে কই মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা যেমন সহজ হয়েছে তেমনিভাবে মাছটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। কই মাছ সাধারণত কচুরিপানা, আগাছা ও ডালপালা অধ্যুষিত জলাশয়ে বসবাস করে থাকে। কম গভীরতাসম্পন্ন পুকুরে কই মাছ সহজেই চাষ করে যায়। কই মাছের অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে দীর্ঘক্ষণ সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এজন্য কই মাছ জীবিত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়। কই মাছের রোগবালাই কম হয় এবং বিরূপ আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়। কই মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন করতে হলে কই মাছের পুকুর অবশ্যই রোদযুক্ত স্থানে হতে হবে। কই মাছের জন্য নির্বাচিত পুকুর অবশ্যই কম কাদাযুক্ত হতে হবে। পুকুরে চার-পাঁচ মাস পানি থাকতে হবে। ১৫-১০০ শতাংশ আয়তনের পুকুর নির্বাচন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে এর চেয়ে বড় বা ছোট পুকুর হলে মাছ চাষ করা যাবে। পুকুরের পূর্ব এবং দক্ষিণ পার্শ্বে যেন কোনো গাছপালা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উত্তর বা পশ্চিম পার্শ্বে গাছপালা থাকলে তেমন একটা অসুবিধা হয় না। যদি গাছপালা থাকে তবে গাছের পাতা যেন পুকুরে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুকুরে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। পুকুরের চারিপাশে নেট দিয়ে বেড়া তৈরি করতে হবে।
কই মাছ চার-পাঁচ মাসে ৬০-৭০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে। প্রতি কেজি ২০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ৪০০ গ্রাম খাদ্য খেয়ে কেজি কই মাছ উৎপাদন হবে। কই মাছ চাষে ভালো উৎপাদন পাওয়ার জন্য বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। পানির গুণাগুণ ঠিক রেখে মাছ চাষ করতে হবে।