টানা দুই বছর সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমানো অর্থের পরিমাণ কমতে দেখা যাচ্ছে। ২০২০ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্রাঁ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ২১৭ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্রাঁ ৯২.৮৬ টাকা হিসাবে)।
এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ (৫ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা)। ২০১৮ সালে ছিল ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ (৫ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা)। গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০২০’ শিরোনামে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেশটিতে থাকা বিদেশিদের আমানতের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কোনো বাংলাদেশি যদি তার নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা করে থাকেন, তার তথ্য এই প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
দীর্ঘকাল যাবৎ নাম-পরিচয় গোপন রেখে অর্থ জমা রাখার জন্য ধনীদের আকর্ষণীয় গন্তব্য হলো সুইজারল্যান্ড। সুইস ব্যাংকে থাকা এই অর্থের একটি অংশ পাচার হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। নাম-পরিচয় গোপন থাকায় সুইস ব্যাংকগুলোতে সারা বিশ্ব থেকেই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ রাখা হয়। সুইজারল্যান্ডের সংবিধান এবং ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী সেখানে ব্যাংক গ্রাহকদের গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়। তবে ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর হওয়ার পর বার্ষিক ভিত্তিতে জমা টাকার হিসাব দিচ্ছে সুইজারল্যান্ড। বছর ভিত্তিতে কোন দেশের কত টাকা জমা আছে, সে তথ্য তারা প্রকাশ করছে। তবে কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হয় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সুইস ব্যাংকগুলোতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি অর্থ জমা রাখতে পারেন। তবে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে সে দেশে জমা করার সুযোগ নেই। কঠোর গোপনীয়তার কারণে অর্থ গচ্ছিত রাখার নিরাপদ স্থান হিসেবে সুইজারল্যান্ড অর্থ পাচারকারীদেরও নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চাপের মুখে সুইস ব্যাংকগুলোর এই কঠোর গোপনীয়তার নীতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। সেখানে গচ্ছিত অর্থ যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, সেক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিচয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে তারা তথ্য দিতে বাধ্য। এ জন্য সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ গচ্ছিত রাখার প্রবণতা কমতে পারে।
সুইস ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশিদের গচ্ছিত জমার পরিমাণ গত কয়েক বছরের মধ্যে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ছিল। সে সময় জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০১৭ সালে কমলেও (৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্রাঁ) সেটি আবার ২০১৮ সালে (৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ) বেড়ে যায়। এর পর ২০১৯ ও ২০২০ সালের হিসাবে জমানো অর্থের পরিমাণ কমতে দেখা যাচ্ছে।