তৃণমূলকে চাঙা রাখতে ‘কৌশলী’ বিএনপি

তৃণমূলকে চাঙ্গা রাখতে নানা কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি। প্রথমবারের মতো ৮২ সাংগঠনিক জেলা ও এর অধীনে থাকা ইউনিটে মাসব্যাপী ভার্চুয়াল সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এসব কর্মসূচি দিলেও মূলত তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় করাই মূল টার্গেট বিএনপির। করোনার মধ্যে এসব কর্মসূচিতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের রাজপথের আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা। ইতোমধ্যে ২০ সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে সভা শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি জেলার সঙ্গেও সভা হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, দেশে লকডাউন থাকায় বিএনপির সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার কথা থাকলেও দলটি এখন আটঘাট বেঁধে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। লকডাউন শেষ হলে কর্মসূচি নিয়ে মাঠের রাজনীতিতে নামতে চায় দলটি। এর অংশ হিসাবে প্রতিদিন অন্তত ৫ টি সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে ভার্চুয়াল সভা করছে। এতে বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য উপস্থিত থাকছেন। গত ৪ জুন থেকে সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে সভা শুরু করে দলটি। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, যশোর, নড়াইল, ভোলা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা শেষ হয়েছে। এসব সভায় জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনার পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেন নেতারা। এতে অধিকাংশ নেতা শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দলের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, নতুন নির্বাচনের দাবিতে সব সময় সরব বিএনপি। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিএনপি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কিছুটা সীমিত করলেও দাবি থেকে সরে আসেনি। তারা মনে করেন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য ভোটের দাবিতে আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। একইভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতেও আন্দোলনের বাইরে কিছুই ভাবছে না নেতাকর্মীরা। এজন্য করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই বড় ধরনের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই অংশ হিসাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে সভা, ভার্চুয়ালে সভাসহ নানা কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যেই শুরু করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ভোটবিহীন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই নতুন নির্বাচনের দাবিতে মাঠে রয়েছে বিএনপি। সে লক্ষ্যেই জনমত তৈরি করতে নানাভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নতুন নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আমাদের আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। সেই লক্ষ্যেই আমরা সভা-সমাবেশ ও সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমরা দল-মত নির্বিশেষ সবাইকে পাশে চাই। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা দাবি আদায় করব।

জানা গেছে, ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে তার মাজারে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচিতে ব্যাপক শোডাউন করে বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে ১৫ দিনের নেওয়া কর্মসূচিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের পাশাপাশি ঢাকাসহ সারা দেশেই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো মাঠে সরব রয়েছে। অঙ্গসংগঠনগুলো পৃথকভাবেও নানা কর্মসূচি পালন করছে। সরগরম এখন বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ও। প্রতিদিনই নেতাকর্মীরা এখন কেন্দ্রীয় কার্যালয়মুখী। রাজধানীসহ সারা দেশে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণসহ নানা কর্মসূচি নিয়েও ব্যস্ত নেতাকর্মীরা।

বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান যুগান্তরকে বলেন, মঙ্গলবার রাজধানীতে একটি আলোচনা সভায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাকর্মীর ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই জয়ী হব। দরকার আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলন। এর কোনো বিকল্প নেই।’ এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এপ্রিলে প্রথম বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের ধারাবাহিক বৈঠক হয়। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের মতামত নেন হাইকমান্ড। তারাও আন্দোলন একমাত্র পথ বলে মত দেন। দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার কাছে একই বার্তা পৌঁছেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, করোনা পরিস্থিতিতেও বিএনপির রাজনীতি থেমে থাকেনি। আমরা ভার্চুয়ালি নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছি। এখন রাজপথের নানা কর্মসূচিও দেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই আমরা পুরোদমে মাঠের রাজনীতিতে ফিরব। বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, তৃণমূল হচ্ছে বিএনপির প্রাণশক্তি। তাদের সাংগঠনিক শক্তি আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছে। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নেতাকর্মীরা মাঠে সরব রয়েছে। হাইকমান্ডের নির্দেশনা পেলে দাবি আদায়ে আমরা সফল হব।