The heyday of jute is returning

বিশ্বের শীর্ষ পাট উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সর্বশেষ স্ট্যাটিস্টিক্যাল বুলেটিনের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে পাটের উৎপাদন ৯ লাখ ৮০ হাজার টন। আর বাংলাদেশের উৎপাদন ছিল ১৪ লাখ ৮ হাজার টন। ভারতে পাট উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষস্থান দখল করেছে।

পাট খাতের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৭২ শতাংশ এখন বাংলাদেশের দখলে। পাট কৃষিজাত পণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এখন থেকে পণ্য রপ্তানিতে মিলবে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
পাট ও পাট জাতীয় ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন, পাটচাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও উদ্ধুদ্ধকরণ, উন্নতমানের পাটবীজসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাট উৎপাদন বেড়েছে। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার-জেডিপিসির নিবন্ধিত উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টিনন্দন ও শৈল্পিক গুণসম্পন্ন নতুন নতুন ডিজাইনের বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করছেন এবং বিশ্ববাজারে বহুমুখী পাটজাত পণ্যকে জনপ্রিয় করতে প্রচার-প্রচারণাসহ বিদেশে বিভিন্ন মেলার আয়োজনের কাজ চলমান। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। এ ছাড়া পাটবীজ উৎপাদনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি রোডম্যাপও তৈরি করা হয়েছে।

পাট বিজ্ঞানীদের গবেষণায় পাটপাতা থেকে খাদ্য তালিকায় পাট পাতার ভেষজ চা, বিস্কুট, রোজেলা ড্রিংকস ও পাটশাক স্বাস্থ্যগত ভূমিকা রাখছে। পাটের আঁশের পাশাপাশি সম্ভাবনার নতুন খাত হিসেবে আবির্ভূত পাটকাঠি থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় উচ্চমূল্যের অ্যাক্টিভেটেড চারকোল। এই চারকোল থেকে তৈরি হচ্ছে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপির কালি, মোবাইল ফোনের ব্যাটারি, ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্ট, বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী পণ্য। এ চারকোল রপ্তানি হচ্ছে চীন, তাইওয়ান, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সূত্রমতে, এ খাতে প্রত্যক্ষভাবে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে।

বিশ্বখ্যাত বিলাসবহুল গাড়ি ও উড়োজাহাজের ইন্টেরিয়রও তৈরি হচ্ছে পাট দিয়ে। জাপানের টয়োটা কোম্পানির গাড়ির বডিতে পরিবেশবান্ধব পাট ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আমেরিকার শীর্ষ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জিএম মোটরস এবং জাপানের মিতসুবিশি কোম্পানিও তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের পাট ব্যবহার করছে। টয়োটা গাড়ির বডির ৩৭ শতাংশে পাট ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পাট দিয়ে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরির চিন্তাভাবনা চলছে। এ জন্য বিশ্ববিখ্যাত কানাডিয়ান ফেল কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের কান্ট্রি প্রতিনিধি নিয়োগ করেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিও গাড়ির বডিতে ব্যবহারকৃত কাচ, অ্যাজবেস্‌টস্ ও প্লাস্টিকের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পাট ব্যবহারের জন্য গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।
কালের পরিক্রমায় কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার বাড়লেও বর্তমান টেকসই উন্নয়নের যুগে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। এই চাহিদা মেটাতে পাটকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে আমাদের কাজ করতে হবে।