own reporter
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন হাজিরপাড়া ইউনিয়নের চরচামিতা গ্রামে চাচাতো দেবরের সঙ্গে ভাবীর পরকীয়া প্রেমের জেরেই খুন হয়েছেন দিনমজুর আলমগীর হোসেন।
এ ঘটনায় স্ত্রী ইয়ানুর বেগম (৩৫) ও চাচাতো দেবর রাজ্জাককে গ্রেপ্তারের পর তারা উভয়ই ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
শনিবার (১৭ অক্টোবর) চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজিজুল ইসলাম। হত্যার শিকার মৃত আলমগীর হোসেন চরচামিতা গ্রামের লাতু মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী ইয়ানুর বেগম ও দুই মেয়ে এবং এক ছেলে সন্তানকে নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যেই কোনোমতে সংসার চলছিল দিনমজুর আলমগীর হোসেনের। অভাব অনটন থাকায় মাঝে মধ্যে সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো।
এই সুযোগে একই বাড়ির অবিবাহিত চাচাতো দেবর রাজ্জাক গৃহবধূ ইয়ানুর বেগমের প্রতি করুণা দেখাতে আসেন। রাজ্জাক প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নেয়া শুরু করেন এবং সাহায্যের হাত বাড়ান ইয়ানুরের সংসারের প্রতি। তবে এই সাহায্যের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল গৃহবধূ ইয়ানুরের প্রতি তার লোলুপ দৃষ্টি।
একপর্যায়ে গৃহবধূ ইয়ানুর বেগম ও দেবর রাজ্জাকের মধ্যে দৈহিকভাবে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। দিনেরপর দিন তারা দৈহিক মেলামেশায় লিপ্ত হয়। এভাবে কেটে যায় অনেকদিন। পরে রাজ্জাকের পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে রাজ্জাককে ঢাকা পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু মোবাইলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ চলতে থাকে। এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ আরো বাড়তে থাকে। পরে রাজ্জাক ও ইয়ানুর দু’জনে মিলে পরিকল্পনা নেয় আলমগীরকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার। ঘটনারদিন গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে কাউকে না জানিয়ে রাজ্জাক ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন।
এরপর কৌশলে রাজ্জাক মোবাইল ফোনে আলমগীরকে ঘটনাস্থলে ডেকে আনেন এবং সেখানেই তাকে হত্যা করে ধানক্ষেতের কাঁদা পানিতে লাশ ফেলে দেন। এরপর ওই রাতেই রাজ্জাক কাউকে কিছু না বলে পুনরায় ঢাকায় চলে যান। এদিকে স্ত্রী ইয়ানুর বেগম পরদিন সকালে স্বামী আলমগীরকে মৃগী রোগী সাজিয়ে মূলঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান।
এসময় স্ত্রী ইয়ানুর পুলিশকে জানায়, তার স্বামী একজন মৃগী ও শ্বাসকষ্টের রোগী ছিল। রাতে বাগানে তাল খোঁজার জন্য গিয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজনের ধারণা ছিল হয়তো কোনো অদৃশ্য ভূত পেত্নী অথবা মৃগী রোগের কারণে মারা গেছে। তবে মৃত আলমগীরের ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পায় পুলিশ।
আর এই আঘাতের সূত্র ধরেই পুলিশ এ ঘটনার পেছনের রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চালিয়ে যায়। একপর্যায়ে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকান্ডে জড়িত আসামি স্ত্রী ইয়ানুর বেগম ও চাচাতো দেবর রাজ্জাককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা উভয়ই হত্যার পরিকল্পনা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর সকাল ৮টায় হাজিরপাড়া ইউপির চরচামিতা গ্রামের জনৈক মো. আলমগীর হোসেনের মৃতদেহ তার বাড়ির পশ্চিম পাশে একটি ধানক্ষেতে পাওয়া যায়। পরে মৃতের বাবা লাতু মিয়া চন্দ্রগঞ্জ থানায় বাদি হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এরপর থেকে টানা ৮দিন তদন্ত করে আলমগীর হোসেনের হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম উদ্দীন চাঞ্চল্যকর এই হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আদালতে আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানে সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, পুলিশ সুপার মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় এই হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচিত হয়েছে।