Health Minister sees 'improvement' in health

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা এবং স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়ম নিয়ে সংসদে আবারও তোপের মুখে পড়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বুধবার সংসদে ‘মেডিকেল ডিগ্রিস (রিপিল) বিল-২০২১’ এবং ‘মেডিকেল কলেজ (গভর্নিং বডিস) (রিপিল) বিল-২০২১’ পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্যখাতের নানা সমালোচনা করেন। একের পর এক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের যৌক্তিকতা ও সেখানকার শিক্ষার মান, চিকিৎসকদের রাজনীতি করা, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় এবং চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।

বিএনপি-জাপার এমপিদের সমালোচনার জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি হয়েছে। করোনার সময় কেউ বাইরে যেতে পারেননি। সবাই দেশেই ছিলেন। কোভিড, নন-কোভিড সব চিকিৎসা দেশে হয়েছে। এখান থেকে বোঝা যায় হাসপাতালের অবস্থা ভালো। সরকারি চিকিৎসকদের রাজনীতি করা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ডাক্তারদের অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। স্বাচিপ, বিএমএ রয়েছে। রাজনীতিতো সকলেই করতে পারে। প্রকৌশলী, আইনজীবীরা রাজনীতি করতে পারেন। সে অনুযায়ী চিকিৎসকরা অ্যাসোসিয়েশন করলে তাতে কোনো দোষ বা অন্যায় দেখি না। তারা তো সেবা দিচ্ছে।’ডাক্তাররা যদি রাজনীতি করেন তাহলে আমাদের কাজটা কী: ফিরোজ রশীদ

বিল পাসের প্রক্রিয়ায় জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিএনপি করে গিয়েছিল ড্যাব, আওয়ামী লীগ এসে করেছে স্বাচিপ। সেক্ষেত্রে আমরা কী কারণে বসে থাকছি? এই আইনের মধ্যে যদি মন্ত্রী আনতেন যে- ডাক্তাররা এবং বৈজ্ঞানিকরা রাজনীতি করতে পারবেন না, তাহলে খুব খুশি হতাম। কিন্তু সেটা আনা হয়নি। ডাক্তাররা যদি এই দেশে রাজনীতি করেন, তাহলে আমরা কি করব? আমাদের কাজটা কী? উনারা চলে আসুক রাজনীতি করতে। যারা ভালো ছাত্র তারা ডাক্তারি পড়ে। কিন্তু তারা যদি রাজনীতি করে তাহলে আমরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছি।

বিসিএস অফিসার হয়েও ডাক্তাররা কেন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন: মুজিবুল হক চুন্নু

জাপার এমপি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অ্যাডমিন ক্যাডারের লোক, জজ বা পুলিশ ক্যাডারের লোকেরা তো চাকরি করে প্রাইভেট কোনো বিষয়ে কনসালটেন্সি করতে পারবেন না। ডাক্তার সাহেবরা কেন বিসিএস অফিসার হয়ে ডিউটির পর প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে? সেক্ষেত্রে তার যে মূল কাজ সেটা ঠিক থাকে না। এটা দীর্ঘদিনের একটা সমস্যা। মন্ত্রীকে বলব- যদি উপকার করতে চান, তাহলে ডাক্তার সাহেবদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসটা আপনারা দয়া করে বন্ধ করার চেষ্টা করেন। জনগণের পয়সা দিয়ে তাদের বেতন দেবেন, তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন, এটা আমরা করতে পারি না। ভর্তির জন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কয়েক লাখ টাকা নেয় আনঅফিশিয়ালি। অন্যায়ভাবে এত টাকা নিচ্ছে। চুন্নু আরও বলেন, এই বিল আনার চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। টিকা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারেনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে একটি রোডম্যাপ হয়েছে। সবক্ষেত্রে কেন প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে? একটি কমিটি করে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার জন্য খরচের হার নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি জানান জাপার এই এমপি।

করোনায় অনেকে প্রাণে বাঁচলেও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে: রুমিন ফারহানা

সংরক্ষিত আসনে বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন- দেশ যায় কোন দিকে, মানুষের সমস্যা যায় কোন দিকে, মানুষ কোন বিষয় নিয়ে সাফার করছে, আর আমরা আলোচনা করছি কী? অদ্ভুত লাগে! করোনাকালে অর্থনৈতিকভাবে কতগুলো পরিবার পঙ্গু হয়ে গেছে, সেই খবর কী আমাদের কাছে আছে? করোনাকালে হাতে গোনা কিছু রিপোর্ট আসছে যেখানে দেখা যাচ্ছে- করোনায় সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পড়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, অনেকে হয়তো প্রাণে বেঁচে গেছেন, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন। জমানো টাকা শেষ হওয়া থেকে শুরু করে বিরাট ঋণের জালে আটকা পড়েছে বহু মানুষ। করোনার আগে যেখানে মধ্যবিত্ত ছিল ৭০ শতাংশ, সেখানে মধ্যবিত্ত নেমে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। দরিদ্র মানুষ যেখানে ছিল ২০ শতাংশ, সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে। করোনাকাল বলে হয়ত এব্যাপারে মিডিয়ার কিছুটা মনোযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেলে গিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার ইতিহাস কিন্তু নতুন কিছু নয়।

সমালোচনাকারী এমপিদের ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, উনারা বেশ এনার্জি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন। চালিয়ে যান, আমিও চালিয়ে যাব আপনাদের সাথে। কাজেই কোনো অসুবিধা হবে না। আপনারা দোষ-ত্রুটি খুঁজে পাবেনই। সমুদ্রের মধ্যে দুই বালতি ময়লা ফেললে সমুদ্র নষ্ট হয়ে যাবে না, পানি নষ্ট হয়ে যাবে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সরকারের সময়ে আমরা কী করেছি স্বাস্থ্যখাতে, আর আপনারা কী করেছেন। এবিষয়টি একটু তুলে ধরতে চাই। আমরা জানি আপনারা কী বলতে পারেন। তাই আজকে প্রস্তুত হয়ে এসেছি। বললে সারাদিন লাগবে। কমিউনিটি ক্লিনিক ১৪ হাজার ছিল। প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন, যেখানে ৩০ রকমের ওষুধ ফ্রি দেওয়া হত হত। স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। আপনারা এসে ওটাকে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এটা হল স্বাস্থ্যসেবায় আপনাদের ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সময় কী হয়েছে আমরা জানি না। সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা এসময় টেবিল চাপড়ে বলতে থাকেন, ‘দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল’।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তার বক্তব্যে বলেন, এখন পর্যন্ত মোট ১৬ কোটি ডোজ করোনার টিকার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। আমরা শুধু ভ্যাকসিন আনছি না, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করা। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অতি দ্রুত দেশে ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আড়াই কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। দেড় কোটি মানুষকে দুই ডোজ করে টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। চীন থেকে ৬ কোটি ডোজ টিকার নিশ্চয়তা পাওয়ার পর দেখলাম এই টিকা আনতে দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা দরকার। টাকা যত লাগুক, প্রধানমন্ত্রী টিকা নিয়ে আসতে বলেছেন। আমরা কোভ্যাক্স থেকে ৫ কোটি টিকা পাব। সবমিলিয়ে ১৬ কোটি ভ্যাকসিনের অর্ডার আছে। ভ্যাকসিন গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

image_pdfimage_print