একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বী হত্যার বিচারের দাবিতে একাই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধাকন্যা রুফিয়া বেগম। গতকাল সুনামগঞ্জ আদালত চত্বরে। ছবি : কালের কণ্ঠ
পালিয়ে বেড়ানো এই মা সন্তান হত্যার বিচার চাইতে বেছে নিয়েছেন আদালত চত্বর। গতকাল বুধবার সেখানে গলায় ছেলের ছবি ঝুলিয়ে বিচার দাবি জানান।
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়ারাই গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের কন্যা রুফিয়া বেগম বলেন, ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকায় ছাতক পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লিয়াকত আলীর নির্দেশে তাঁর একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করে সন্ত্রাসীরা। এরপর ২৬ জুলাই রাতে তিনি (রুফিয়া) ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ এরই মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। লিয়াকত আলীসহ আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁকে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় তিনি ছাতক থানা, সিলেট ডিআইজি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে লিখিত অভিযোগ করেছেন। রাব্বী হত্যায় জড়িত তারেক হোসেন ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
রুফিয়া বেগম আরো বলেন, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। তবে বিবাদীদের আইনজীবীরা নানা অজুহাতে তারিখ পেছাচ্ছেন। এই সুযোগে আসামিরা জামিনে ছাড়া পেয়ে তাঁকে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তাঁদের ভয়ে তিনি এখন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি নিরুপায় হয়ে আসামিদের দ্রুত বিচারের দাবি নিয়ে আদালত চত্বরে এসেছেন।
ছেলে হত্যার বিরুদ্ধে মায়ের একাকী প্রতিবাদী কর্মসূচিতে আদালত এলাকায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে সংহতি জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির সুনামগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চিত্তরঞ্জন তালুকদার।
চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘নিরুপায় হয়ে ওই নারী একমাত্র ছেলের খুনিদের বিচারের দাবির জন্য আদালত চত্বরকে বেছে নিয়েছেন। একাকী প্রতিবাদ করে আমাদের দৃষ্টি কেড়েছেন। তিনি বিলাপ করছেন ছেলে হত্যার বিচারের জন্য। আমরাও এই অসহায় মায়ের সন্তান খুনের বিচার চাই। ’
আদালত চত্বরে উপস্থিত মানবাধিকার নেত্রী ফৌজিআরা শাম্মী বলেন, ‘আমরা সন্তানহারা ওই নারীর কষ্টের কথা জানি। আমরাও চাই তাঁর ছেলের খুনিদের বিচার হোক। ’
সরকারি কৌঁসুলি খায়রুল কবীর রোমেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি ওই সন্তানহারা নারী যাতে তাঁর ছেলের খুনের বিচার পান। পুত্র শোকে ওই মা এখন আর স্বাভাবিক নেই। তিনি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ছেলের দ্রুত বিচার চাইছেন। আমরা তাঁকে সর্বোচ্চ বিচার পাইয়ে দিতে কাজ করছি। ’