কয়েক লাখ বছরে মানুষের দেহের আকার উল্লেখযোগ্য হারে পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে বলে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানির টুবিনগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই গবেষণা করেছেন। গবেষণায় তাঁরা ‘হোমোজেনাস’ গোত্রের তিন শতাধিক ফসিল থেকে দেহ ও মস্তিষ্কের আকার নিরূপণের চেষ্টা করেছেন। গবেষকেরা এসব তথ্য কয়েক লাখ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের গতিবিধির সঙ্গে সমন্বয় করেছেন। এসব ফসিল যখন জীবিত মানুষ ছিল, তখন তারা কী ধরনের জলবায়ুতে বেঁচে ছিল, তা বের করার চেষ্টা করেছেন তাঁরা।
গবেষকেরা দেখেছেন, গত কয়েক লাখ বছরে মানবদেহের আকৃতি পরিবর্তনের পেছনে জলবায়ু, বিশেষত তাপমাত্রা মূল ভূমিকা রেখেছে। তীব্র শীত, রুক্ষ আবহাওয়ার সঙ্গে তুলনামূলক বড় দৈহিক গঠনের সম্পর্ক রয়েছে। অপর দিকে তুলনামূলক উষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে খর্বকায় আকৃতির সম্পর্ক রয়েছে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভল্যুশনারি ইকোলজির অধ্যাপক আন্দ্রে মনিকা বলেছেন, দীর্ঘদেহী হলে শীতল আবহাওয়া থেকে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যায়। মানুষ যত লম্বা হবে, তার শরীর তত কম বিস্তৃত হবে। তার ফলে আরও কার্যকরভাবে তাপ শুষে নেবে।
অধ্যাপক আন্দ্রে মনিকা বলেন, এ ধরনের সম্পর্ক অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও দেখা গেছে। এমনকি সমসাময়িক মানুষের মধ্যেও এর প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, কয়েক লাখ বছর ধরে মানবদেহের আকৃতির পরিবর্তনের পেছনে এটাই বড় ভূমিকা রেখেছে।
গবেষণাটি ‘নেচার কমিউনিকশনস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
মস্তিষ্কের আকারের ওপর পরিবেশগত প্রভাব নিয়েও কাজ করেছেন গবেষকেরা।
অন্তত তিন লাখ বছর আগে আফ্রিকায় ‘হোমোসেপিয়েন্স’–এর উদ্ভব হয়। কিন্তু ‘হোমোজেনাস’–এর অস্তিত্ব ছিল আরও অনেক আগে। এই হোমোজেনাসের মধ্যে ‘নিয়ান্ডারথালস’, ‘হোমো হাবিলিস’ ও ‘হোমো ইরেকটাস’ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হোমো হাবিলিসের মতো আগের প্রজাতিগুলোর তুলনায় হোমোসেপিয়েন্সের মস্তিষ্ক ৫০ শতাংশ ভারী ও তিন গুণ বড়। কিন্তু এই পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে এখনো ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ রয়েছে।
এই গবেষকেরা বলছেন, মস্তিষ্কের আকৃতি পরিবর্তনের পেছনে জলবায়ুর বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। তবে মস্তিষ্কের আকারে অনেক ভিন্নতা রয়েছে, যা পরিবেশগত পরিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।