১৯৯৪ সালে আমি আর শাবনাজ ভীষণ ব্যস্ত নায়ক-নায়িকা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হবে। জাকী আংকেল (সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী) ফোন করে বললেন, ‘এফডিসিতে এসো।’ সেখানে গিয়ে আনিসুল হকের (সাবেক মেয়র) সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, ‘দিলীপ কুমার সাহেব আসছেন। তোমরা তাঁকে নিয়ে একটা গানের পরিকল্পনা করে ফেলো। তোমাদের পারফর্ম করতে হবে।’
কী গান করা যায় ভাবছিলাম। প্র্যাকটিসের সময় ছিল না। বাসায় এসে শাবনাজের সঙ্গে আলাপ করলাম। দুজন মিলে ‘মিলতে হি আঁখে দিল হুয়া দিওয়ানা’ গানটা পছন্দ করলাম। নাচ কম, গানটায় একটা সফিস্টিকেটেড ব্যাপার ছিল। কারণ, সেদিনের অনুষ্ঠানে ঢাকা শহরের সব অভিজাত অতিথি থাকবেন। ওই সময় দিলীপ কুমার সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তাঁর সঙ্গে আমাদের একটা পুরোনো যোগসূত্র ছিল।
কীভাবে দেখা করা যায়, ভাবছিলাম। শাবনাজও খুব চাইছিল। দিলীপ কুমার বলতে সে অজ্ঞান। এদিকে শেরাটনে (বর্তমান ইন্টারকন্টিনেন্টাল) উঠেছিলেন তিনি, সেখানে আমাদের পরিচিত কেউ ছিল না। ভাবলাম, শুটিংয়ের ফাঁকে যেহেতু শেরাটনে প্রায়ই যাই, আড্ডা দিই, আমাকে হয়তো তাঁরা চিনবেন। দিলীপ কুমারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ মিলতেও পারে। এরপর আমি ও শাবনাজ সরাসরি চলে গেলাম। অনেকেই এগিয়ে এসে জানতে চাইলেন, ‘কী ব্যাপার নাঈম ভাই, কেমন আছেন?’ একজনকে বললাম, দিলীপ কুমার সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমাদের জানানো হলো নিরাপত্তার কারণে তাঁর সঙ্গে দেখা করা সম্ভব নয়। আমি বললাম, রুমে ফোন করে বলুন, খাজা নাঈম মুরাদ, ঢাকার নবাব পরিবার থেকে এসেছে। আমি নবাব খাজা স্যার সলিমুল্লাহর প্রপৌত্র, ফিল্ম অ্যাক্টর। আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। তিনি একটু সময় দেবেন কি না।
আমরা লবিতে বসে কফি খাচ্ছিলাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফোন এল। দিলীপ কুমারের ভাই বললেন, ‘হাই, হাউ আর ইউ? হু ইস দিস?’ আমি ইংরেজিতে বললাম, ‘আমার দাদি মেহেরজাবীন, তিনি দেশভাগের আগে বোম্বেতে থাকতেন। তিনি বোম্বের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, প্রযোজনা করেছেন।’ শুনে তিনি বললেন, ‘ইয়েস প্লিজ। দিলীপ স্যার আপসে মিলনে কি লিয়ে হ্যায়। আপ ওপর চলি আইয়ে।’