22nd death anniversary of prominent industrialist Ibrahim Company

own reporter

আলহাজ্ব ইব্রাহিম মিঞা

১লা জুন বেগমগঞ্জের বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব ইব্রাহিম কোম্পানীর ২২তম মৃত্যু বার্ষিকী। প্রতিথযশা শিল্পপতি বৃহত্তর নোয়াখালীর কৃতি সন্তান ও বেগমগঞ্জ উপজেলার বালুচরা গ্রামের গর্বিত সন্তান আলহাজ্ব ইব্রাহিম মিঞা (আজিজ কোম্পানী) জীবনবাসান ঘটে ১৯৯৮সালের ১জুন। ইব্রাহিম কোম্পনী হাঁটি হাঁটি পা পা করে অনেক দূর এগিয়েছেন। ১৯২৩ সালে নোয়াখালী জেলার বালুচরা গ্রামে তাঁর জন্ম । তিনি একজন ছোট ব্যবসায়ী থেকে নামীদামী শিল্পপতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন।

মৃত্যুকালে দেশের শীর্ষ স্থানীয় হাতে ঘোনা কয়েক জন ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আলহাজ্ব ইব্রাহিম মিঞা ছিলেন অন্যতম। শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠায় মরহুম ইব্রাহিম কোম্পানি দেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। বিশেষ করে তাঁর প্রচেষ্টায় স্বীয় প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান গুলোতে বেকার যুবকদের চাকুরী দিয়ে তিনি অমর হয়ে আছেন। শৈশবে পিতাকে হারিয়ে ইব্রাহিম মিঞা টানাপোড়ন সংসারের হাল ধরতে গিয়ে সুদুর কলকাতা চলে যান। বেশ কিছু দিন চাকুরী করে ১৯৪৮ সালে দেশে চলে আসেন এবং বিড়ির ব্যবসা শুরু করেন।

কয়েক বছর ব্যবসা করার পর মরহুম ইব্রাহিম মিঞা চন্দ্রগঞ্জ বাজারে প্রতিষ্ঠা করেন স্পেশাল আজিজ বিড়ি ফ্যাক্টরী। অল্প দিনের মধ্যে তিনি একই বাজারে হাজেরা সোপ ফ্যাষ্টরী স্থাপন করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে চৌমুহনী ডেল্টা জুট মিল প্রতিষ্ঠা হলে তার শেয়ার হোল্ডার ও পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিছু দিন ইব্রাহীম কোম্পানীর ভারপ্রাপ্ত এ মিলের এমডি ছিলেন। মরহুম আজিজ কোম্পানী ১৯৭২ সালে রংপুরে আজিজ এন্ড কোং নামে তামাক প্রসেজিং কেন্দ্র, ১৯৭৭ সালে ডিসইন ভেষ্টমেন্ট বোর্ড হতে চট্রগ্রামের নাছিরাবাদে চিটাগাং এল্যুমিলিয়াম এন্ড ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঢাকা টঙ্গীতে আগাছা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ ক্রয় করে তার নামে করন করেন।

ইব্রাহিম রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ, ১৯৮৩ সালে নারায়নগঞ্জে গোদনাইলে লিকুইডেশান সেল হতে ঢাকেশ্বরী কটন মিলস ক্রয় করে তা ইব্রাহিম টেক্সটাইল মিলস লিঃ এ রূপান্তর করেন। একই স্থানে ১৯৯১ সালে ইব্রাহীম কস্পোজিট টেক্সটাইল মিলস্ লিঃ স্থাপন করেন। ব্যাকিং ক্ষেত্রে ইব্রাহীম কোম্পানীর অবদান অপরিসীম। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৯৮২ সালে দি সিটি ব্যাংক লিঃ প্রতিষ্ঠা করা হয় । তিনি প্রায় ৬ বছর এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর উদ্যোগেই মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিনি ঢাকায় মেট্রোপলিটন মেডিক্যাল সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বিড়ি সমিতির সভাপতি ছিলেন।

ইব্রাহিম কোম্পানী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ঠ অবদান রাখেন। তিনি নিজ এলাকায় ইব্রাহিম মিঞা উচ্চ বিদ্যালয় ,বালুচরা হাছানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, বালুচরা সমাজ কল্যাণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্দ্রগঞ্জস্থ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে ইব্রাহীম ছাত্রাবাস ও আলহাজ্ব ইব্রাহীম মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল চমৎকার। মরুহুম ইব্রাহীম মিয়া ১৯৮৪ সালে হজ্বব্রত পালন করেন। মরহুম ইব্রাহিম মিঞা জীবদ্দশায় দীর্ঘদিন ধরে ডায়বেটিক ও লিভার সিরোসিস রোগে ভূগছিলেন। ১৯৯৮ সালের ২২ মে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেদ হাসপাতালে নেয়ার ৮ দিন পর ১৯৯৮ সালের ১ জুন মারা যান।

৩ জুন মরুহুমের লাশ ঢাকায় আনা হয়। ওইদিন বিকালে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। জানাজায় হাজার হাজার মুসল্লী শরীক হন। মৃত্যু কালে তিনি ২ স্ত্রী ১১ ছেলে ও ৫ মেয়ে রেখে যান। ইব্রাহিম কোম্পনী ছিলেন শুধু বৃহত্তর নোয়াখালী নয় সমগ্র বাংলাদেশের ধর্নাঢ্য ব্যাক্তিদের একজন। তিনি জীবদ্দশায় দেশব্যাপী যে অবদান রেখে গেছেন তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। তাঁর বড় ছেলে এম এ হাসেম ও ফিরোজ আলম বাবু বর্তমানে তার রেখে যাওয়া অসংখ্য প্রতিষ্ঠান সমূহের ঐতিহ্য ধরে রেখে দেশবাসীর আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ৪ নং আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের বালুচরা গ্রামে।

মরহুম ইব্রাহিম মিঞা তাঁর জীবদ্দশায় ঢাকা-চট্রগ্রামে ভারী ও মাঝারি শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার পাশাপাশি নিজ গ্রামে নিজ নামে প্রতিষ্ঠা করেন, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি আলিম মাদ্রসা। তাঁর রেখে যাওয়া শিল্প-কারখানারগুলো দক্ষতার সাথে সফল ভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সজীব কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এম.এ.হাসেম পিতার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও অবকাঠামো সম্প্রসারণের পাশাপাশি ঐতিহ্য ধরে রাখায় এলাকাবাসীর সুনাম অর্জন করেছেন। মরহুম ইব্রাহিম মিয়া শিক্ষার প্রতি গভীর ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবেই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোই আজ তাঁকে চির অমর করে রেখেছেন। যাঁর হাতের ছোঁয়ায় প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর স্মৃতি এখনো পরম মমতায় বুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন এলাকাবাসী।