করোনা মহামারির মধ্যেই দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের তাপমাত্রা সারা বছর অ্যাডিস মশা জন্মানোর উপযোগী। তবে বৃষ্টিপাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। শীতকালে যখন বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হয় না, তখনও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। তবে সংখ্যা কম।
বাংলাদেশে আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হয়। তবে জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এই চারটি মাসকে ডেঙ্গুর মূল মৌসুম বলা হয়। সেই অনুযায়ী এই ডেঙ্গুর মৌসুমে করোনার মধ্যে প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায়ই ভর্তি হয়েছে ৩০ জন। আর ৩০ জুন থেকে ৩ জুলাই গত চার দিনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮১ জন। গত জুন মাসেই ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ২৭১ জনের।
ঢাকা শহরের গাছপালা কমে যাওয়ায় অ্যাডিস এলবোপিকটাস মশা কমে গেছে এবং অ্যাডিস ইজিপ্টি বেড়ে গেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে আসছে। এর মধ্যে ধানমন্ডি, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী ডিএইচওএস, গুলশান, বনানী ও উত্তরা এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে।
অভিযোগ উঠেছে, দুই সিটি করপোরেশন রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে মশক দমনের কাজে ভাটা পড়ছে। বেশির ভাগ এলাকায় অ্যাডিস মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে।
এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, করোনার মধ্যে যেভাবে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে তাতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি ভয়াভহ আকার ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনকে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে অ্যাডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। চিরুনী অভিযানের পাশাপাশি স্প্রের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক ভাগ করে মশক দমনে কাজ করতে হবে।
সিটি করপোরেশনের বক্তব্য: ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, আমরা আলাদা করে কোনো কর্মসূচি নিচ্ছি না। এই সময়টাই ডেঙ্গুর মৌসুম। যার কারণে আমরা আগে থেকেই বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। এর মধ্যে যাদের গত বছর বাসা বাড়িতে অ্যাডিসের লার্ভা পাওয়া গিয়েছে তাদের ডাটাবেজ অনুযায়ী তাদের সতর্ক করছি। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি যেন কোনোভাবে জমে না থাকে এ জন্য তাদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছি। আর প্রতিদিন স্প্রে চলমান রয়েছে।
ডাক্তারের পরামর্শ : প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে বলেন, ডেঙ্গু হলে রোগীর জ্বরে সঙ্গে মাথা ব্যথা ও ব্যাক পেইন থাকবে। শরীরে র্যাশ ওঠে কী না দেখতে হবে। দাঁত ব্রাশ করলে রক্ত বের হওয়া, নাক দিয়ে রক্ত বের হয় কী না অথবা পায়খানা কালো আকারের হয় কী না খেয়াল রাখতে হবে। চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। জ্বর হলে শুধু প্যারাসিটামল খাবে। এর বাইরে কিছু খেতে হলে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিত্সা নিতে হবে। প্রচুর তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।