I have not received any 'mail' for a long time

নীরবে নিভৃতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা ‘লোকান্তরিত’ হয়ে যাচ্ছে। সে সেবাটি হচ্ছে ডাকসেবা। অনেকে বলবেন, ‘চিঠি লিখি না, ডাকসেবা কীভাবে থাকবে?’ তাহলে কুরিয়ার সার্ভিস কীভাবে দিন দিন রমরমা ব্যবসা করছে। ডাক বিভাগ বলবে, ‘আমরাও নতুন সেবা প্যাকেজ চালু করে রাজস্ব আয় বাড়িয়েছি।’ কিন্তু আমি সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে সরকারের প্রতিশ্রুত ডাকসেবা পাই না। কুরিয়ার সার্ভিসে একটি সাধারণ চিঠি পাঠাতে আমার কাছ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হয়। যে চিঠি আসে তাও ৩/৪ দিন পর তাদের অফিসে গিয়ে নিয়ে আসতে হয়। আমি সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচটা চিঠি, বুকপোস্ট বা পার্সেল পাই। তার কোনোটিই ডাকে নয়। কেউ সরাসরি কর্মী মারফত, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠায়। কোনো কোনো চিঠি এলে কুরিয়ার থেকে ফোন করে। সশরীর গিয়ে নিয়ে আসতে হয়। এ অনাবশ্যক ব্যয় ও হয়রানির প্রতিবিধান কী?

অথচ ডাক বিভাগ তাদের ‘মিশন’ স্টেটমেন্টে লিখেছে, ‘শ্রেণি-পেশানির্বিশেষে সমাজের সব স্তরের জনগণের জন্য দ্রুততার সঙ্গে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী ডাকসেবা নিশ্চিতকরণে ডাক অধিদপ্তর অঙ্গীকারবদ্ধ।’ ডাক বিভাগের মাথাভারী আমলা-কাঠামো অক্ষত এবং উত্তরোত্তর আরও জৌলুশময় হলেও মাঠপর্যায়ে জনবল ও সেবা সংকুচিত। তারা অনেকটা আত্মসমর্পণের মতো যেন দুহাত তুলেই রেখেছে। মন্ত্রী, সচিব, অধিদপ্তর, ডাক ক্যাডার, পদোন্নতি, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ—সবই ঠিক আছে। নির্মম সত্য হচ্ছে, আমরা কোনো ‘ডাক’ পাই না।

বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষে ডাক প্রথা অনেক পুরোনো। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে ডাক প্রথার উল্লেখ আছে। সামরিক ও রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজনে রাজকার্যে চিঠিপত্র আদান-প্রদান, সংবাদ প্রেরণ অতি প্রাচীন রীতি। বিশেষ কর্মচারী মারফত এ কাজ করা হতো। সরাসরি দূত প্রেরণও হতো। ভারতের ইতিহাসে সম্রাট শের শাহকে তাঁর ঘোড়ার ডাক পরিবহনের জন্য স্মরণ করা হয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগেও ডাচ, পর্তুগিজ ও ফ্রান্স বেনিয়ারা তাঁদের অধিকৃত এলাকায় ডাক চালু করেছিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দে বোম্বে, কলকাতা ও মাদ্রাজে ডাক ব্যবস্থা চালু করেছিল। লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৭ সালে কলকাতায় পোস্ট অফিস ও পোস্টমাস্টার নিয়োগ করেন। ১৭৭৪ সালে লর্ড হেস্টিংস ডাক ব্যবস্থাকে আরও জোরালো করেন। এভাবে বাংলাসহ পুরো ভারতবর্ষে একটি পুরোনো ও শক্তিশালী সরকারি দপ্তর ও সেবা হিসেবে ডাক বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

image_pdfimage_print