প্রকাশিত বাজেটঃনারীর ক্ষমতায়নে কতটা সহায়ক

কোভিড-১৯-এর কারণে নারীর বিপর্যয় বেশি বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা। কিন্তু বাজেটে কোভিড ক্ষতিগ্রস্ত নারীর উন্নয়ন এবং পুনর্বাসনে নির্দিষ্ট বরাদ্দ এবং পরিকল্পনা নেই। করোনার সময় আলাদা করে ঘোষণা করা হচ্ছে না জেন্ডার বাজেট তাই বোঝাও যাচ্ছে না সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় কোন মন্ত্রণালয় থেকে নারী কীভাবে লাভবান হবে। আইএলওর তথ্যে দেখা গেছে, তরুণদের তুলনায় তরুণীদের জীবনে কোভিড-১৯-এর বেশি প্রভাব পড়েছে। কাজ তাদেরই বেশি গেছে। পর্যটন খাতসহ যেসব খাত মহামারিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে, সেসব খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি হওয়া এর একটি কারণ। লকডাউনের মধ্যে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের দেখাশোনা ও পড়ানোর বাড়তি দায়িত্বও নারীকে পালন করতে হয়েছে।আইএলওর তথ্যে দেখা যায়, মধ্য আয়ের দেশগুলোতে পুরুষের বেকারত্বের হার যেখানে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে নারীদের ক্ষেত্রে তা ২৯ শতাংশ।

 

এসব বিষয় নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, ‌‘২০২০-এ কোভিড পরিস্থিতির পর আর জেন্ডার বাজেট প্রকাশিত হয়নি। এ বছরেও দেওয়া হয়নি। এ কারণে নারীর জন্য প্রকল্পগুলো থেকে কি সুবিধা পাওয়া যাবে এটা এখন আর জানা সম্ভব হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘বাজেটে থাকা বরাদ্দ যাতে নারীর অধিকতর কল্যাণের জন্য ব্যয় হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জন্য থাকা বরাদ্দ এবার কমেছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য গত বছর ৬৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও তার সবটুকু খরচ হয়নি।’

 

মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ব্যয় কম এটা ন্যায্য নয়। নারীর সহায়ক বাজেট নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘ই-কমার্স, মোবাইল ব্যাংকিং ভিত্তিক সেবার ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। এতে নারী উদ্যোক্তা যারা ঘরে বসে কাজ করছে তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জেন্ডার বাজেট কার্যকর করতে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে জেন্ডার সংবেদনশীল কাঠামো তৈরি, জেন্ডার ডিসিএগ্রিগেটেড ডাটা সংগ্রহের প্রতি জোর দিতে হবে। শিশু দিবাযত্ন নীতি ২০২১ প্রণীত হতে যাচ্ছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি খাত ও অন্যান্য খাতকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতিতে নারীরা যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের জন্য স্বল্প সুদে বা সুদবিহীন এককালীন অর্থ সহায়তা দেওয়া যেতে পারে।’ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘জেন্ডার বাজেট বই বের না হলেও নারীর জীবনযাপনের কল্যাণে, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে গৃহীত প্রকল্পের অগ্রগতির মূল্যায়নের একটা সংক্ষিপ্ত খতিয়ান প্রকাশ করতে হবে।’ বাজেটে নারী অংশ নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘বাজেট হলো আর্থিক খতিয়ান। যে কোনো দেশের উন্নতির জন্য নারীর অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্

 

সমাজ ও রাষ্ট্র নারীকে সহায়তা করছে তবে নারীর অংশীদারিত্বের খতিয়ান বাজেটে কোথাও দেখি না। এর স্বীকৃতি দিতে হবে। জেন্ডার বাজেটে এর ধারাবাহিক পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন করতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। মহিলা মন্ত্রণায়লকে সহিংসতা প্রতিরোধে আরো তৎপর হতে হবে যাতে বাজেট বরাদ্দ ব্যয় যথাযথ হয়। সেফটি নেট প্রোগ্রামের বরাদ্দ কোথায় কীভাবে হচ্ছে তা দেখতে হবে। শিক্ষায় নারীর ঝরে পড়ার হার ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরো সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি স্বাস্থ্য খাতকে পুরো ঢেলে সাজানো, নারীর জন্য স্বাস্থ্য কমিশন তৈরি এবং তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে মূল ধারায় নিয়ে আসার দাবি জানান। উইমেন চেম্বারস অ্যান্ড কমার্সের সভাপতি সংসদ সদস্য সেলিমা আহমেদ বলেন, ‘উন্নয়নের কিছু কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাজেট পাশ না হওয়া পর্যন্ত বোঝা যাবে না নারী উন্নয়ন দক্ষতা বৃদ্ধিতে কি করা হবে। অর্থমন্ত্রীকে নারী উদ্যোক্তা ও নারী উন্নয়নে আলাদা বরাদ্দ রাখতে হবে।’