Milestone for girls by defeating Pakistan

অদ্ভুত মিল। ১৯৯৯ সালে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে তৃতীয় ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ঠিক তৃতীয় ম্যাচেই প্রথম জয় বাংলাদেশের। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান হওয়ায় ৯ রানের জয়টা আরো রঙিন।

বাংলাদেশের ২৩৪ রানের জবাবে পাকিস্তান থামে ২২৫-এ। ঐতিহাসিক মুহূর্তটা ‘আমরা করব জয়’ গানে উদযাপন করেন খেলোয়াড়রা। টিমবাসের সেই বাঁধনহারা উল্লাসের রেণু দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।

 

হ্যামিল্টনে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ফাহিমা খাতুন। জয়ের আশা জাগানো পাকিস্তানের স্কোর একটা সময় ছিল ২ উইকেটে ১৮৩। তখনই ফাহিমার লেগ kalerkanthoস্পিনের ইন্দ্রজাল। তাঁর করা সাত বলে চার উইকেট হারিয়ে দিশাহারা পাকিস্তান। এর তিনটি উইকেট তাঁর, আরেকটি রান আউট। অথচ বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে একাদশেই জায়গা পাননি ফাহিমা। ৩৮ রানে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা তাঁরই। অথচ একজন লেগ স্পিনারের হাহাকার বাংলাদেশ ছেলেদের দলে! সেই হতাশা কিনা শক্তি মেয়েদের দলে।

লেগ স্পিন ভেল্কিতে হাত ফসকানোর উপক্রম হলেও ৪১.৬ থেকে ৪৩.৬ ওভার—এই সময়ে পাঁচ রানে পাঁচ উইকেট শিকারে ম্যাচটা মুঠোয় নিয়ে আসে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরিয়ান সিদরা আমিন ফেরার পর মুঠোবন্দি ম্যাচ। বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের ইতিহাস গড়ে উচ্ছ্বসিত অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি, ‘এটি বিশ্বকাপে আমাদের প্রথম জয়। আমরা ইতিহাস গড়েছি। ’

১৯৯৯ বিশ্বকাপে আমিনুল ইসলামের দল ২২ রানে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে পেয়েছিল প্রথম জয়। সেবার নিজেদের শেষ ম্যাচে ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, ইনজামাম-উল হকদের পাকিস্তানকে হারিয়ে চমকে দেয় বাংলাদেশ। তবে মেয়েদের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোটা চমক নয়, প্রত্যাশিত। মেয়েদের ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ৬, পাকিস্তান ৮ নম্বরে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সর্বশেষ খেলা দুই ম্যাচেও পাকিস্তানকে হারিয়েছে নিগারের দল। বিশ্বকাপে তাই আত্মবিশ্বাসটা ছিল। সেই জ্বালানিতেই দুর্দান্ত জয়। ’৯৯ বিশ্বকাপে খেলা বাঁহাতি পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম এখন দলের ম্যানেজার ও প্রধান নির্বাচক হয়ে নিউজিল্যান্ডে। ঐতিহাসিক জয়টার পর আবেগে ভাসলেন তিনি, ‘বিশ্বকাপে প্রথম উইকেটটা আমার। পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটা খেলিনি, তবে ড্রেসিংরুমে ছিলাম। সেই জয় আর এবার নির্বাচক হয়ে জেতার মধ্যে আলাদা কোনো পার্থক্য নেই—আনন্দে আত্মহারা হয়েছি দুবারই। ’

শুরুতে ব্যাট করে বাংলাদেশ পায় সাত উইকেটে ২৩৪ রানের পুঁজি। ওয়ানডেতে এটা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংস, সেটা এলো কিনা বিশ্বকাপের মঞ্চে। আগের সেরা ২১১ রানের স্কোর ২০১৯ সালে পাকিস্তানেরই বিপক্ষে লাহোরে। গতকাল দুই ওপেনার শারমিন আখতার ৪৪ ও শামীমা সুলতানা করেছিলেন ১৭ রান। তৃতীয় উইকেটে ফারজানা হক ও অধিনায়ক নিগার সুলতানার ৯৬ রানের জুটিতে বড় স্কোরের ভিত পায় বাংলাদেশ। ৬৪ বলে ৪৬ করা নিগারকে এলবিডাব্লিউ করে জুটিটা ভাঙেন ফাতিমা সানা। ফারজানা হক ফেরেন ১১৫ বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ৭১ রানে। তাঁর ক্যারিয়ারের এটা নবম ফিফটি ও সেরা ইনিংস। বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচেও করেছিলেন ৫২। শেষ দিকে রুমানা আহমেদ ১৩ বলে ১৬, রিতু মনি ১৩ বলে ১১ আর সালমা খাতুন ১০ বলে ১১* করায় স্কোরটা পৌঁছে ২৩৪ রানে। নাশরা সিন্ধুর শিকার তিন উইকেট।

জবাবে বিসমাহ মারুফের দল উদ্বোধনী জুটিতে পায় ৯১ রান। ৪৩ করা নাহিদা খানকে বোল্ড করে জুটিটা ভাঙেন রুমানা আহমেদ। এরপর অধিনায়ক বিসমাহকে নিয়ে ৬৪ রানের জুটি সিদরা আমিনের। ৩৮তম ওভারে বিসমাহকে ফেরান জাহানার আলম। তবে একটা প্রান্ত আগলে পাকিস্তানকে ভরসা দিয়ে যাচ্ছিলেন সিদরাহ। তবে ফাহিমার ঘূর্ণিজালে আটকা পড়ে ১৩ বলের ব্যবধানে পাঁচ উইকেট খুইয়ে হাতছাড়া হয় ম্যাচটা। প্রত্যাবর্তনের অসাধারণ গল্প লেখেন মেয়েরা।

ফাহিমার ৪২তম ওভারের শেষ বলে ওমাইমা সোহাইলের দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ফারজানা। রুমানা আহমেদের পরের ওভারে ০ রানে আউট নিদা দার। ফাহিমার করা ৪৪তম ওভারে তিন উইকেট হারায় পাকিস্তান। দ্বিতীয় বলে আলিয়া রিয়াজ ও তৃতীয় বলে ফাতিমা সানাকে এলবিডাব্লিউ করে হ্যাটট্রিকের আশা জাগান ফাহিমা। সেটা না হলেও শেষ বলে রান আউট সিদরা নাওয়াজ। ১৩ বলে পাঁচ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচের গতিই বদলে দেয় বাংলাদেশ।

তবু ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করা সিদরা আমিন যতক্ষণ ছিলেন, শঙ্কার মেঘটা কাটেনি পুরোপুরি। ৪৮তম ওভারে তিনি রান আউট হলে জয়টা হয়ে যায় সময়ের অপেক্ষা। ততক্ষণে আস্কিং রান রেট উঠে গেছে আকাশে। শেষ দিকের ব্যাটারদের সেই ব্যবধান কমানোর সামর্থ্যও ছিল না। তাই পাকিস্তান ৫০ ওভারে অল আউট না হলেও ৯ রানের ঐতিহাসিক জয়ে মাঠ ছাড়েন নিগার, ফাহিমা, জাহানারারা। হ্যামিল্টনে পতপত করে উড়তে থাকে বাংলাদেশের জয়ের পতাকা।