নৌকার পক্ষে মাঠে নেই জেলার আ’লীগ নেতারা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে মানিকগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচনী পরিবেশ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগম এবং জেলা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ টুলুর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। কর্মীদের মধ্যে মামলা-পাল্টা মামলা হচ্ছে। এতে দলের নেতাকর্মী বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

জানা যায়, মমতাজ বেগম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার পর জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতারা তাঁর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামাতে পারেননি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল।
বর্তমান সংসদ সদস্য ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ বেগম ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও নৌকা প্রতীক পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ টুলু এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে ট্রাক প্রতীকে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

খোঁজ নিয়ে এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই দুই প্রার্থীই দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার পর থেকে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান জানান, মমতাজ বেগমের কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড ভালো না হওয়ায় এবার নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়ার পরও সিংগাইর ও হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের ৭০ ভাগ নেতাকর্মী তাঁর সঙ্গে নেই। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় ২৭ ইউনিয়নের ২০ জন চেয়ারম্যান মমতাজের পক্ষ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদের হয়ে কাজ করছেন।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় প্রার্থীর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী শহিদুর রহমান সমকালকে জানান, দলের পদপদবি থাকা যেসব নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে এখনও নামেননি তার কারণও টাকা। দলীয় প্রার্থী মমতাজ বেগম ওই সব নেতাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারেননি।

শহিদুর রহমান আরও অভিযোগ করেন, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করার জন্য জেলার অনেক নেতা তৃণমূলের নেতাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলেও মাঠে নৌকার পক্ষে কোনো প্রভাব পড়ছে না। কারণ ভোটারদের কথা হলো– নেতারা টাকা খেলেও ভোট তারাই দেবেন।

মামলা-পাল্টা মামলা
গত রোববার বিকেলে হরিরামপুর উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর অনুসারীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা করে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর তিন কর্মী আহত হন। এর পরের দিন উপজেলা সদরে একই স্থানে দুই প্রার্থীর অনুসারীরা পৃথক মিছিল করেন। এতে উপজেলা সদরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় গত সোমবার হরিরামপুর থানায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই অনুসারী। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন নৌকা প্রার্থীর এক অনুসারী। এ ঘটনা নিয়ে হরিরামপুরে এখনও দুই প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে।

গত মঙ্গলবার ভোরে সিংগাইর উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের বৈরাগীরটেক এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী অস্থায়ী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই দিন বিকেলে সিংগাইরের তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতীকে ভোট চেয়ে ছোট পোস্টার (হ্যান্ডবিল) বিতরণ করছিলেন তাঁর অনুসারীরা। এ সময় মমতাজ বেগমের অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী ইস্কান্দার স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের গুলি করে হত্যা এবং হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দেন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় গত বুধবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী আলী ইস্কান্দারকে আসামি করেন সিঙ্গাইর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।

মঙ্গলবার দিন সন্ধ্যায় হরিরামপুর উপজেলার কৌড়ি এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী শাখাওয়াত হোসেনকে প্রাণনাশের হুমকি দেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নৌকার কর্মী ফরিদ মোল্লা ও রিফাত চৌধুরী। এ ঘটনায় শাখাওয়াত বাদী হয়ে ফরিদ ও রিফাতসহ অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব ঘটনায় জেলার তিনটি আসনের মধ্যে মানিকগঞ্জ-২ আসনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দু’পক্ষই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী এবং কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দুই প্রার্থীর অনুসারীরা আরও মারমুখী হয়ে উঠছেন। এতে দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন বলেন, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তিনি টাকার বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।