টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটে কৃষকের মুখে হাসি

বাগেরহাটে অনাবৃষ্টিতে পুড়তে থাকা ফসলের জমি বৃষ্টির পানি পেয়ে আমন ধান চাষে আশা জাগিয়েছে। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসে কৃষকের রোপণ করা চারা পানির অভাবে হলুদ বর্ণ হয়ে শুকিয়ে গেলে বৃষ্টির পানি পেয়ে তাতে আবারও সবুজ রঙ ধরেছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এরই মধ্যে জেলায় ৯৫ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ শেষ হয়েছে। এদিকে বৃষ্টির ফলে ভালো ধান পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন কৃষক।

বাগেরহাট সদর উপজেলার পুটিমারী এবং কচুয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের বিভিন্ন মাঠে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচণ্ড খরায় ফেটে চৌচির থাকা জমিতে পানির দেখা মিলেছে। আর ধান রোপণের জন্য প্রস্তুত করা শুকনো জমিতে ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি পানি জমে আছে। পানি পেয়ে কৃষক মনের আনন্দে ধানের চারা রোপণ করছেন। বৃষ্টির পানি পেয়ে কৃষক পরিবারের দুশ্চিন্তাও কেটে গেছে।

বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন জানান, বিগত বছর গুলোতে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে তাদের আমন ধান রোপণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু এবছর অনাবৃষ্টির কারণে তার সব জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারেনি। এমনকি বীজপাতাও তুলতে পারছিল না। তার সাড়ে চার বিঘা জমির অধিকাংশই ফাঁক পড়েছিল। ধান রোপণের মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। রোপণের আশা ছেড়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু ছয় দিনের বৃষ্টিতে তাদের জমিতে প্রায় এক হাত পানি দেখা গেছে। পানি পেয়ে তারা ফাঁকা জমিতে ধান রোপণ করছেন।

একই কথা জানিয়েছেন সদর উপজেলার পুটিমারি গ্রামের হেদায়েত হোসেন, আলমগীর শেখসহ অন্যরা।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, পানির অভাবে মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ জমি অনাবাদি পড়ে ছিল। রোপণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না এবং ফলনে বিপর্যয় ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়ে ছিল। কিন্তু একটানা ছয় দিনের বৃষ্টিতে সেই শঙ্কা কেটে গেছে। বৃষ্টির পানি পেয়ে কৃষকরা তাদের ফাঁকা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছেন। এরিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ কাজ শেষ হয়েছে। আমন ধান রোপণের সম্পূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি আশাবাদী।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২১ সালে বাগেরহাটে মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চার মাসে তিন হাজার ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর চলতি বছরের মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দুই হাজার ৫৩

সেই হিসেবে ৪৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত কম ছিল। আর ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬১ দশমিক চার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলায় এবছর এবছর ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ পর্যন্ত ৭০ হাজার ৭০৩ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ জমি রোপণ করা হয়েছে।

এবছর দুই লাখ ৬৬ হাজার ৯৮০ মেট্রিকটন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় দুই লাখ ৪৪ হাজার ৩২৮ টি কৃষক পরিবার রয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানায়।

 

image_pdfimage_print