আবহমান বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ও শতবর্ষের প্রাচীন সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ নৌকা বাইচ। নদীমাতৃক এ দেশের গ্রামীণ লোক সাংস্কৃতির সেই ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও বিল-বাওড়ে আয়োজন করা হয় নৌকা বাইচের। এরই ধারাবাহিকতায় বাসাইলের দিগন্ত বিস্তৃত জলভরা দৃষ্টিনন্দন বাসুলিয়ায় উৎসবমুখর পরিবে শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। থৈথৈ জলে, ঢাক-ঢোলের তালে তালে গ্রাম বাংলার গান আর মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছন্দ মাতিয়ে তোলে বাসুলিয়ার চাপড়া বিলের শান্ত জলের ঢেউকে। আর সেই তালে তাল মেলাতে নৌকা বাইচ দেখতে বিশাল বিস্তৃত চাপড়া বিলের বুকে নামে লাখো দর্শনার্থীর ঢল ।
প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ণীল এ নৌকা বাইচের আয়োজন করেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মিয়া স্মৃতি সংসদ। এতে জেলার অন্যতম বিনোদনমূলক এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন জেলা ও টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলা থেকে জলপথে নৌকা আর সড়কপথে যানবাহনে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো।
প্রতিযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও টাঙ্গাইলে কয়েকটি উপজেলা থেকে আল্লাহ ভরসা, মায়ের দোয়া, সোনার তরী, ফুলের তরী, আদর্শ তরী, ময়ূর পঙ্খী, পঙ্খীরাজ ও জলপরীসহ বাহারী নাম ও রঙের ডিঙি, কুশা, সিপাই, খেলনা, অলংগাসহ কয়েক ধরনের প্রায় অর্ধশতাধিক নৌকা অংশগ্রহণ করে। ছোট, বড় ও মাঝারি নৌকা পৃথক কয়েকটি রাউন্ডে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত রাউন্ডে টাঙ্গাইলের ভূয়াপুরে নিকড়াইলের ‘যমুনার তরী’ নৌকাটি চ্যাম্পিয়ন হয়। রানার্সআপ হয় একই উপজেলার ‘একতা’ নৌকা। পরে অতিথিবৃন্দ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ সময় চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপসহ অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকটি নৌকাকেই আকর্ষনীয় পুরষ্কার দেওয়া হয়।
বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি।
বরেন্য অতিথি ছিলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. হারুন অর রশিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম মোখলেছুর রহমান, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সঞ্জিত কুমার রায় (বিপিএম), টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ প্রমুখ।
প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুস সামাদ, স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আমিন শরীফ সুপন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের পৃষ্ঠপোষকতায় এ অুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না, সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিত্রা শিকরী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নৌকা বাইচ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব সোহানুর রহমান সোহেল।
স্থানীয় সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের বলেন, নৌকা আমার অস্তিত্ব, বাংলাদেশ আমার অস্তিত্ব, বঙ্গবন্ধু আমার অস্তিত্ব, তারই আলোকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ ধারাবাহিতা ভবিষ্যতেও অব্যহত থাকবে।