জামাই-মেয়েকে নিয়ে ঘরে ফেরা হলো না ফাহিমার

আশুলিয়ার চারাবাগের খেজুর বাগান এলাকায় ৮তলা ভবনের ৬ তলার একটি ফ্লাটের সাবলেটে রুম ভাড়া নিয়ে মেয়ে রিয়া মনিকে সঙ্গে করে বসবাস করে আসছিলেন মা ফাহিমা খাতুন। মঙ্গলবার দুপুরে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, শনিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানের কিছু জিনিসপত্র এলোমেলোভাবে অবস্থায় পড়ে আছে। ঘরে একটি খাট, প্লাস্টিকের একটি ওয়্যারড্রপ ও একটি টেলিভিশনসহ প্রয়োজনীয় আসবাপত্র রয়েছে ওই ঘরে।

নববিবাহিত মেয়ে ও জামাই আসবে বলে খাটের ওপর বিছিয়ে রেখে গেছেন একটি নতুন বিছনার চাদর। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। ছোট্ট এ সংসারে নববিবাহিত জামাই-মেয়েকে নিয়ে আর ফেলা হলো না তার।

ওই ফ্ল্যাটের সাবলেট ভাড়াটিয়া নাসরিন আক্তার সমকালকে জানান, ‘মা-মেয়ে দুজনেই ওই এলাকার পৃথক দুটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ফাহিমা চাকরি করতেন সিআইপিএল পোশাক কারখানায়। রিয়া মনি চাকরি করতেন রেডিয়েন্স পোশাক কারখানায়।’

‘দুজনের আয়েই চলতো তাদের সংসার। গত শনিবার দুপক্ষের সম্মতিতে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয় হৃদয় আর রিয়া মনির। ওই ৮তলা ভবনের ছাদে আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশেই মেয়েকে বিয়ে দেন ফাহিমা।’

‘বিয়ের সকাল আনুষ্ঠানিকতা শেষে শনিবার সন্ধ্যায় মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে বিদায় দেন ফাহিমা। মেয়েকে বিদায়ের পর ছেলে ফাহাদকে জড়িয়ে ধরে ফাহিমা আনন্দঅশ্রু ফেলেছিলেন দুচোখ বেয়ে। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কয়েক বছর আগেই সাভারে আসেন ফাহিমা।’ যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘৭/৮ মাস আগে মাসে ৪ হাজার ২০০ টাকায় ওই ফ্লাটের সাবলেট একটি রুম ভাড়া নেন ফাহিমা খাতুন। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েক রকম মিষ্টি নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যান ফাহিমা খাতুন। যাওয়ার সময় আমাদের বলে যায়, “তোরা একটু রুমটার দিকে খেয়াল রাখিস, জামাই-মেয়ে নিয়ে রাতেই বাসায় ফিরব।” কিন্তু রাত ৯টা ১০টা বাজলেও ফাহিমা আপা বাসায় না ফেরায় আমরা তার অপেক্ষায় ছিলাম। এরপর রাতে টেলিভিশনে রিয়া মনির ছবি দেখে আমরা সবাই ঘটনাটি জানতে পারি। আর বুঝতে ফাহিমা আপা মারা গেছেন।’

ওই সাবলেটের ভাড়াটিয়া মামুন ইসলাম জানান, ‘ফাহিমা পোশাক কারখানায় অপারেটরের চাকরি করলেও তার আচার-আচরণে কেউ বুঝতে পারতো না যে তিনি একজন পোশাকশ্রমিক। মেয়ে রিয়া মনিকে কলেজে পড়াশুনা করিয়েছেন। ছেলেকে ঢাকায় মাদ্রাসায় পড়াশুনা করাচ্ছেন। পোশাক কারখানায় বেশি করে ওভারটাইম করতেন। মেয়ে রিয়া মনিও চাকরি করতেন। দুজনের আয়ে ভালোই চলছিল সংসারটা। কিন্তু ফাহিমা আপা মেয়ের সুখ দেখে যেতে পারলেন না।’

উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরায় জসীমউদ্দিন সড়কে বিআরটি প্রকল্পের উড়ালসড়কের ৮০ টন ওজনের গার্ডার চাপা পড়ে আশুলিয়ার খেজুর বাগানের পোশাক শ্রমিক ফাহিমা খাতুনসহ ৫ জনের মর্মান্তি মৃত্যু হয়।

 

image_pdfimage_print