গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে না চাওয়ায় প্রেমিকাকে হত্যা

মিঠাপুকুরে স্কুলছাত্রী মোসলেমা খাতুন (১৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। প্রেমের সম্পর্ক এক পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্কে গড়ালে গর্ভবতী হয়ে পড়ে মোসলেমা। কিন্তু গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে না চাওয়ায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে প্রেমিক।

 

এই হত্যায় জড়িত নাহিদ হাসান (২২) নামে ওই প্রেমিককে শনিবার (২৪ এপ্রিল) মধ্যরাতে আটক করে পুলিশ। নাহিদ হাসান উপজেলার দলসিংহপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।

আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর সহকারী পুলিশ সুপার (ডি-সার্কেল) কামরুজ্জামান রবিবার রাতে এক প্রেস বার্তায় জানান, বিকালে নাহিদ হাসান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিকালে উপজেলার ভাংনি ইউনিয়নের বউরাকোট গ্রামের মোতালেব মিয়ার মেয়ে মোসলেমা খাতুন বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরে পরিবারের লোকজন মোসলেমাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন। গত শনিবার বিকালে মোসলেমার বাড়ির পাশের একটি ভুট্টা ক্ষেত থেকে হঠাৎ পঁচা গন্ধ ভেসে আসে। গন্ধের সূত্র ধরে ভুট্টা ক্ষেতে গিয়ে মোসলেমার অর্ধগলিত মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোসলেমার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এ ঘটনায় মোসলেমার বাবা বাদি হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশসহ পিবিআই ও সিআইডি। রাত পৌনে ৩টার দিকে নাহিদ হাসানকে বাড়ি থেকে আটক করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে আদালতে পাঠানো হলে সেখানে নাহিদ জানায়, মোসলেমা খাতুন সম্পর্কে তার চাচাতো বোন। তাদের মধ্যে প্রায় এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও হয় তাদের। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে তাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর নাহিদ দিনাজপুরে চাকরিতে চলে যায়। ১৫ দিন আগে মোসলেমা নাহিদকে জানায় সে গর্ভবতী। কিন্তু নাহিদ তা অস্বীকার করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নাহিদকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলে মোসলেমা। কিন্তু নাহিদ আসতে চায়নি। মোসলেমা বার বার জিদ করলে সে দেখা করতে রাজি হয়। পরে বাড়ির পাশের একটি ভুট্টা ক্ষেতে গিয়ে তারা দেখা করে। এ সময় মোসলেমা তার গর্ভের বাচ্চা রাখতে চেয়ে বিয়ের দাবি করেন। কিন্তু নাহিদ এতে রাজি হয়নি। সে যেকোনভাবে বাচ্চা নষ্ট করতে বলে। মোসলেমা এতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে নাহিদ রেগে গিয়ে ভুট্টা ক্ষেতেই তাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মেরে ফেলে। এরপর বাসায় চলে গিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকেন নাহিদ।মিঠাপুকুর থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন বলেন, পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডির সমন্বিত প্রচেষ্টায় অল্প সময়ের মধ্যে মোসলেমা হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত নাহিদ হাসানকে প্রেফতার করা হয়েছে। সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।