দেশে চালের কোনো ঘাটতি নেই। গত বোরো মৌসুমেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ চাল উত্পাদন হয়েছে। এখন মাঠে আছে আমন। বন্যা না হলে আমনেও ভালো ফলনের আশা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কিন্তু এত ইতিবাচক খবরের পরও অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৫২ টাকায় উঠেছে। এই দাম গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্য চালের দামও বাড়তি। ফলে এই করোনা মহামারির মধ্যে বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কারসাজি চক্রের কারণেই চালের দাম বাড়ছে। বেশি লাভের আশায় মিলার ও মজুতদাররা ধান, চাল মজুত করে রেখেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে ধান-চালের সরবরাহ কম। এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, চালের দাম কমাতে সরকার সারা দেশে ওএমএস চালু করলেও বাজারে তা কোনো প্রভাব ফেলছে না।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ‘নব্য মজুতদারদের’ কারণে চালের দাম বাড়ছে। করোনার কারণে অন্য ব্যবসায় মন্দা থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ধান, চাল কিনে মজুত করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, খাদ্যমন্ত্রী যদি এই মজুতদারদের বিষয়ে জানেন তাহলে কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে বর্তমানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল ২ হাজার ৮৫০ টাকা, বাশমতি ৩ হাজার ৩৫০ টাকা, কাজললতা ২ হাজার ৬০০ টাকা ও মোটা জাতের ব্রি-২৮ ও স্বর্ণা ২ হাজার ২৫০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি চালভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি। অন্য মোকামের অবস্থাও একই। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৪৭ থেকে ৫২ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫০ থেকে ৫৬ টাকা ও সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হয়। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে গত এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, মাঝারি মানের চাল ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও সরু চালের দাম ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়েছে।
চালকল মালিকদের দাবি, মৌসুমের শুরুতেই এক শ্রেণির অসাধু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ধান কিনে বড় মজুত গড়ে তুলেছে। মোকামের বড় বড় মিল মালিকদেরও এখন মজুত আছে মাত্র ১০/১৫ দিন মিল চালানোর মতো ধান। ফলে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৩০ টাকা বাড়তি দামে কিনে মিল চালাতে হচ্ছে। এতে উত্পাদিত চালের দর বেড়ে যাচ্ছে। ধানের দাম না কমলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না বলে জানান চালকল মালিকরা।