কানে থাকছে মাস্টার ফিল্মমেকারদের মহাসমারোহ

পৃথিবী গ্রহের মাস্টার ফিল্মমেকারদের মহাসমারোহ দেখা যাবে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৪তম আসরে। কে নেই! আসগর ফারহাদি, ন্যানি মরেত্তি, জ্যাক অদিয়াঁ, ওয়েস অ্যান্ডারসন, শন পেন, পল ভারহোভেন, মোহাম্মদ সালাহ হারুন, ফ্রাঁসোয়া ওজো, লিও ক্যারাক্স, অ্যাপিচ্যাটপঙ বিরাসেতাকুল, রিয়ুসুকে হামাগুচি, জোয়াকিম লাফোস, ইওয়াকিম ট্রিয়ার, নাদাভ লাপিড, মোহাম্মদ সালাহ হারুন, জাস্টিন কারজেল, কিরিল সেরেব্রেনিকোভসহ সবাই বিশ্ব চলচ্চিত্রে প্রভাবশালী নির্মাতা। ফলে স্বর্ণ পাম নিয়ে আগাম পূর্বাভাস করতে চাইবেন না কেউ!

প্রতিযোগিতা বিভাগে সর্বাধিক ৭টি ছবি ফ্রান্সের। যুক্তরাষ্ট্রের ছবি আছে তিনটি। এছাড়া ইসরায়েল, মরক্কো, হাঙ্গেরি, বেলজিয়াম, জাপান, থাইল্যান্ড, ইরান, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, চাদ, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের একটি করে ছবি আছে স্বর্ণ পামের দৌড়ে।

হলিউড তারকা শন পেন পরিচালিত নতুন ছবি ‘ফ্ল্যাগ ডে’র উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে কানে। এর মাধ্যমে ছয় বছর পর পরিচালকের আসনে পাওয়া গেলো তাকে। এতে অভিনয়ও করেছেন ৬০ বছর বয়সী এই তারকা। ২০১৪ সালে প্রকাশিত জেনিফার ভোগেলের আত্মজীবনী “ফ্লিম-ফ্ল্যাম ম্যান: দ্য ট্রু স্টোরি অব মাই ফাদার’স কাউন্টারফেট লাইফ” গ্রন্থ অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে। ছবিটির গল্প একজন বাবাকে ঘিরে। মেয়ের ভরণপোষণের জন্য ব্যাংক ডাকাত ও সাধারণ মানুষ হিসেবে দ্বৈত জীবনযাপন করেন তিনি। এতে আরও অভিনয় করেছেন জশ ব্রোলিন, মাইলস টেলার, এডি মারসান ও শন পেনের মেয়ে ডিলান পেন।

শন পেন পরিচালিত ‘দ্য লাস্ট ফেস’ ২০১৬ সালে ৬৯তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে ছিলো। ২০০১ সালে ‘দ্য প্লেজ’ ছবির মাধ্যমে ৫৪তম কানে প্রথমবার স্বর্ণ পামের জন্য লড়েছিলেন তিনি। ওই আসরে স্বর্ণ পাম জেতে ন্যানি মরেত্তির “মাই সান’স রুম”। কানের ৭৪তম আসরে প্রতিযোগিতা বিভাগে তার ‘থ্রি ফ্লোরস’ ছবিটি আছে। ইসরায়েলি কথাশিল্পী এশকল নেভোর ‘শালোশ চোমো’ অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে। এবারই প্রথম অন্য কারও গল্প অবলম্বনে ছবি বানালেন ৬৭ বছর বয়সী এই ইতালিয়ান নির্মাতা। এতে তুলে ধরা হয়েছে তিনটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কথা। একই ভবনের ভিন্ন ভিন্ন তলার তিনটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকে তারা।
কানে থাকছে মাস্টার ফিল্মমেকারদের মহাসমারোহস্বর্ণ পাম জয়ী আরও দুই পরিচালকের ছবি আছে এবারের প্রতিযোগিতা বিভাগে। তাদের মধ্যে সাত বছর পর কানে ফিরছেন ফ্রান্সের জ্যাক অদিয়া। ৬৯ বছর বয়সী এই নির্মাতার সঙ্গে ‘প্যারিস, থার্টিন্থ ডিস্ট্রিক্ট’ ছবিটির চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন ৭২তম কান উৎসবে সেরা চিত্রনাট্য পুরস্কার জয়ী ‘পোর্ট্রেট অব অ্যা লেডি অন ফায়ার’-এর পরিচালক সেলিন সিয়ামা।২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কার তামিল গেরিলার গল্প নিয়ে সাজানো ‘ধীপান’ ছবির সুবাদে স্বর্ণ পাম জেতেন জ্যাক অদিয়া।

একযুগ আগে ‘আঙ্কেল বুনমি হু ক্যান রিকল হিজ পাস্ট লিভস’ ছবির মাধ্যমে থাইল্যান্ডকে স্বর্ণ পাম এনে দিয়েছিলেন অ্যাপিচ্যাটপঙ বিরাসেতাকুল। ৫০ বছর বয়সী এই থাই নির্মাতার ‘মেমোরিয়া’ আছে কানের এবারের প্রতিযোগিতা বিভাগে। এশিয়া থেকে আরও রয়েছে জাপানের রিয়ুসুকে হামাগুচির ‘ড্রাইভ মাই কার’।

চাদের প্রখ্যাত পরিচালক মোহাম্মদ সালাহ হারুনের ‘লিঙ্গুই’ এবারের প্রতিযোগিতা বিভাগে আলোচনার জন্ম দিতে পারে। ২০১৩ সালে তার ‘গ্রিগ্রিস’ স্বর্ণ পামের দৌড়ে ছিলো। ২০১০ সালে ‘অ্যা স্ক্রিমিং ম্যান’ জুরি প্রাইজ জেতে কানে।কানে থাকছে মাস্টার ফিল্মমেকারদের মহাসমারোহ

অফিসিয়াল সিলেকশন ঘোষণার আগেই বিশ্বের বৃহত্তম এই চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকরা জানান, এবারের উদ্বোধনী রাতের ছবি নির্বাচিত হয়েছে প্রতিযোগিতা বিভাগে স্থান পাওয়া ফরাসি নির্মাতা লিও ক্যারাক্সের ‘অ্যানেট’। এতে অভিনয় করেছেন অ্যাডাম ড্রাইভার ও মারিয়ন কঁতিয়া। স্বর্ণ পামের দৌড়ে আরও আছে ৫২ বছর বয়সী মার্কিন পরিচালক ওয়েস অ্যান্ডারসনের ‘দ্য ফ্রেঞ্চ ডিসপাচ’। ফ্রান্সে আমেরিকার একটি সংবাদপত্রের কার্যালয়কে ঘিরে এর গল্প। অভিনয়ে টিমোথি শালামে, এলিজাবেথ মস, টিল্ডা সুইনটন, ফ্রান্সেস ম্যাকডরম্যান্ড, বিল মারে, লেয়া সিদু, আড্রিয়েন ব্রডি, ওয়েন উইলসন, বেনিসিও দেল তোরো। প্রতিযোগিতা বিভাগের জন্য আগেই ঘোষিত হয় আরেক ছবি পল ভারহোভেনের ‘বেনেডেট্টা’।

কানে থাকছে মাস্টার ফিল্মমেকারদের মহাসমারোহ

ইরানের খ্যাতিমান পরিচালক আসগর ফারহাদির ‘অ্যা হিরো’ প্রতিযোগিতা বিভাগের অন্যতম আকর্ষণ। রাশিয়ায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে গৃহবন্দি পরিচালক কিরিল সেরেব্রেনিকোভের নতুন ছবি “পেত্রোভ’স ফ্লু” স্বর্ণ পামের জন্য মনোনীত হয়েছে। টড হেইন্স নিয়ে আসছেন ‘দ্য ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড’।

স্বর্ণ পাম জিতবে কোন ছবি তা নির্ধারণে বিচারকদের প্রধান থাকছেন স্পাইক লি। কানের ৭৩তম আসরে অস্কারজয়ী এই চলচ্চিত্র পরিচালককে জুরি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আয়োজকরা শুধু অফিসিয়াল সিলেকশন ঘোষণার পর বাকি সবকিছু বাতিল করেন গত বছর।

গত ৩ জুন অফিসিয়াল সিলেকশন ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে কান উৎসবের পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো বলেন, ‘সিনেমার মৃত্যু হয়নি। বিশ্বজুড়ে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের ফেরা ছিলো করোনাকালে প্রথম সুখবর। আর কান উৎসব হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় সুসংবাদ