Ukraine crisis: Two leaders fighting two types of battles

ইউক্রেন সংকটের ক্ষমতার লড়াইয়ের একটি প্রতীকী চিত্র বলা যায় একে। পরাক্রমশালী ক্রেমলিনের কঠোর শক্তির বিপরীতে কোণঠাসা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের একই সঙ্গে যুক্তি আর আবেগ দিয়ে মন জয়ের চেষ্টা।

বিশ্ব সংবাদের শিরোনামজুড়ে কেবল রাশিয়ার লৌহমানব প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জয়জয়কার। শনিবার টিভি ক্যামেরার সামনে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভারের বড় পরীক্ষা দেখছিলেন তিনি।

চোখেমুখে আত্মবিশ্বাস আর শক্তির বিচ্ছুরণ। ক্রেমলিনের নেতা চেয়েছিলেন তাঁর পরমাণু অস্ত্রসম্ভারকে জাহির করতে। রাশিয়ার সেনারা পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর পরিস্থিতির মহড়া করল এদিন। মহড়া চলল আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ, বোমারু বিমানের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া আর সাবমেরিন থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের।kalerkantho

প্রভাব সৃষ্টি করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষমতা জাহির করার সঙ্গে নাটকীয়তার মিশেল থাকতেই হয়। তার আয়োজনও হয়েছিল ঘটা করে। ক্রেমলিনের সিচুয়েশন রুমে পুতিন তাঁর মিত্র ও ঘনিষ্ঠ অংশীদার বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেংকোকে পাশে নিয়ে বসেন বড় পর্দায় তাঁর দেশের শক্তির প্রদর্শনী দেখতে। পুতিন তাঁর ভূমিকা পালন করেছিলেন একেবারে অক্ষরে অক্ষরে।

রাশিয়ার পারমাণবিক মহড়া অনেক দিক থেকেই গত ৯ দিনের বিশাল সামরিক মহড়ার মুকুটস্বরূপ। ক্রেমলিন বেলারুশ, কৃষ্ণ সাগর ও রুশ ফেডারেশনের অন্যান্য অংশে চালানো আগের কয়েক দিনের অনুশীলনগুলো উপস্থাপন করেছিল রাশিয়ার প্রচলিত সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন এবং তার ন্যাটো মিত্ররা জোরালো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই মনে করে, ওই সব মহড়া আসলে ইউক্রেন আক্রমণ করার প্রস্তুতি আড়াল করতে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা মাত্র।

অন্যদিকে তুলনায় অনেক দুর্বল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি লড়ছেন ‘হারানোর কিছু নেই’ কায়দায়। লেগে আছেন কূটনীতির পথে। দেশ ছাড়া নিরাপদ হবে না বলে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দেওয়ার পরও তিনি জার্মানির মিউনিখ গেছেন নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিতে। সিএনএনের ক্রিস্টিয়ান আমানপুরের সঙ্গে আলাপের সময় খোলাসা করেছেন, কেন তিনি ইউক্রেন সংকট একটি নতুন শিখরে পৌঁছে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতেও দেশ ছেড়ে বাইরে যাওয়া জরুরি মনে করেছিলেন। ‘আমি দেশের প্রেসিডেন্ট। সব অংশীদার এবং বন্ধুরা যেন আমাদের আড়ালে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেয়, তা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ,’ বলেছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, তাঁরা আতঙ্কিত নন। কোনো উসকানিরও জবাব দেবেন না।

অন্তত আনুষ্ঠানিকভাবে, রাশিয়া ও বেলারুশের সামরিক মহড়া গতকাল রবিবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সামরিক শক্তি ব্যবহারের অজুহাত হিসেবে রাশিয়া কাজে লাগাতে পারে, এমন কোনো উসকানি ধরতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনীয়রা সতর্কতার মধ্যে রয়েছে।

বৃহস্পতিবারই কথিত উসকানির আভাস পাওয়া গেল, যখন একটি ইউক্রেনীয় কিন্ডারগার্টেনে গোলাবর্ষণের খবর এলো। অমনি রুশপন্থীরা পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাকামী অঞ্চলগুলো থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাতে শুরু করে। কিন্তু বাইরে থেকে যা মনে হয়, অনেক সময় বাস্তব তা হয় না। রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা লোকজন সরিয়ে নেওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন তার ভিডিও বিশ্লেষণ করে সিএনএন বলছে, ভিডিওগুলো আসলে খুব সম্ভবত গোলাবর্ষণের ঘটনার কয়েক দিন আগেই রেকর্ড করা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই তথ্যযুদ্ধের মুখে সংযমের জন্য তাঁর বাহিনীর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক উসকানি দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমের মারফত এগুলো আমাদের চোখে পড়ছে। কিন্তু আমাদের স্থৈর্য বজায় রাখতে হবে। থাকতে হবে শান্ত। আচরণ করতে হবে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো। আর এই সংকটের সময়ে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীই অন্যদের চেয়ে বেশি পরিপক্ব।

image_pdfimage_print