ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় নিহত ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’র থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মা-বাবা ও ভাইয়ের আহাজারিতে বিষাদ নেমে আসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায়। ‘ওরে আমার বাবা, আইলো না’ চিৎকার করে কাঁদেন হাদিসুর রহমানের মা-বাবা।
গতকাল বুধবার দুপুরে এমভি বাংলার সমৃদ্ধির ২৮ জন ক্রুর সঙ্গে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহ দেশে না আসায় তাঁর মা-বাবা শাহজালাল বিমানবন্দরে বিলাপ করছিলেন। গতকাল দুপুর ১২টায় এমভি বাংলার সমৃদ্ধির নাবিকদের বহনকারী টার্কিশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৭২২ হযরত শাহজালালে এসে পৌঁছয়।
জাহাজটিতে মোট ২৯ জন নাবিক ছিলেন, যাঁদের মধ্যে গত ২ মার্চ রকেট হামলায় নিহত হন হাদিসুর। ওই বন্দর এলাকায় রাশিয়া মাইন পুঁতে রাখায় জাহাজটি বের করা যাচ্ছিল না।
২৮ নাবিকের সঙ্গে হাদিসুরের লাশ আসবে—এমন আশা নিয়ে বিমানবন্দরে আসেন হাদিসুরের বাবা আব্দুর রাজ্জাক, মা আমেনা বেগম, দুই ভাই তরিকুল ইসলাম, গোলাম মাওলা প্রিন্স এবং বোন সানজিদা আক্তার সম্পা। একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়েছে পরিবারটি। ‘মোর বাজান গেলা কই? ও বাজান, তুমি কোমনে আছ? ও বাবারা, তোমরা মোর হাদিস বাবার লাশ লইয়া আইলা না ক্যা? মোর সব শেষ অইয়া গেল। বাবার একটু লাশ দেখতে পারলেই পরানডা জুড়াইত’— কাঁদছিলেন হাদিসুরের মা।
হাদিসুরের বাড়ি বরগুনার বেতাগীর হোসনাবাদ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে। হাদিসুরের মেজো ভাই তরিকুল ইসলাম বিমানবন্দরে বলেন, ‘জীবিত ২৮ নাবিকের সঙ্গে ভাইয়ার লাশ হয়তো ফিরে পাব―এই আশা নিয়ে বিমানবন্দরে এসেছিলাম। ’ হাদিসুরের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকার সহায়তা না করলে আমার ছেলে লাশ দেশে আনা সম্ভব নয়। আমি সরকারের কাছে ছেলের লাশটা চাই। ’
বিমানবন্দরে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের মাস্টার জি এম নূর ই আলম বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত ছিলাম। আমাদের সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা এখানে সুস্থভাবে আসতে পেরেছি, এটাই বড় কথা। আমাদের ছোট দেশ, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও ডিপ্লোম্যাটদের সহযোগিতায় এটি সম্ভব হয়েছে। ’
নিজেরা ফিরতে পারলেও সহকর্মী হাদিসুরের লাশ ইউক্রেইনেই রেখে আসতে হয়েছে নূর ই আলমদের। তিনি বললেন, ‘আমি গভীরভাবে মর্মাহত, হাদিসুরের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। সরকার ও করপোরেশনকে অনুরোধ করব, তাঁর পরিবারকে যেন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। ’
সেদিন আসলে কী ঘটেছিল সে বিষয়ে জাহাজের মাস্টার বলেন, ‘সেদিন আমাদের রুটিন ব্রিফিং ছিল। বিকেলবেলায় হামলা হয়। আমাদের ব্রিজে আগুন লেগে গিয়েছিল। আগুন নেভানোর জন্য আমরা ব্যস্ত ছিলাম। আগুন নেভানো হয়। এরপর টেলিভিশনে আপনারা বাকিটা দেখেছেন। ’
যুদ্ধ পরিস্থিতি আঁচ করে ইউক্রেন থেকে আগেই জাহাজ ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিল কি না—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর বন্দরের ১৯টি চ্যানেল বন্ধ হয়ে যায়, কোনো চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে ফেরার সুযোগ ছিল না।
হাদিসুরের মরদেহ আজ ইউক্রেন থেকে মলদোভা পাঠানো হচ্ছে : সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, হাদিসুর রহমানের মৃতদেহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে মরদেহ ইউক্রেন থেকে মলদোভা সীমান্তের উদ্দেশে রওনা হবে। মলদোভা থেকে নেওয়া হবে রোমানিয়ার বুখারেস্টে। এরপর মরদেহ দেশে আনা হবে।
ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে আটকে পড়া এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের ২৮ নাবিক দেশে ফিরেছেন। গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।