অভিনেতা শব্দটি যাদের নামের পাশে একেবারে মানানসই, সার্থক, তিনি তাদেরই একজন। সাবলীল অভিনয়ে তার বিকল্প খোঁজা অনর্থক। বলিউডের তিন খানের মতো তার নামের পাশেও রয়েছে খান। তবে, তিনি ইরফান খান। রূপালি দুনিয়া যাকে দু’হাত ভরে দিয়েছে। আর তিনিও সমৃদ্ধ করেছেন বলিউড নামের সিনে ইন্ডাস্ট্রিকে। বেঁচে থাকলে আজ ৫৬তম জন্মদিন পালন করতেন এ কিংবদন্তি অভিনেতা।
১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি রাজস্থানের এক মুসলিম পাঠান পরিবারে জন্ম তার। পুরো নাম, সাহেবজাদে ইরফান আলি খান। ছোটবেলায় দারুণ ক্রিকেট খেলতেন তিনি। তবে জাতীয় দল যখন প্রায় হাতছানি দিচ্ছিল, ঠিক তখনই ঘটে অন্য এক ঘটনা। ১৯৮৪ সালে যখন তিনি মাস্টার্সের ছাত্র, তখনই ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা, দিল্লিতে শিক্ষাবৃত্তি পান। সেখানে পড়াশুনা শেষে মুম্বাইয়ে এসে অভিনয় জীবন শুরু করেন ইরফান।
শুরুতেই অনেকগুলো টেলিভিশন ধারাবাহিকে কাজ করেন তিনি। তবে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে ১৯৮৮ সালে। প্রথম সিনেমা মীরা নায়ার পরিচালিত ‘সালাম বোম্বে’ সে বছর অস্কারের মনোনীত হয়েছিলো।
এদিকে, লন্ডনভিত্তিক চিত্রপরিচালক আসিফ কাপাড়িয়া ইরফানকে ‘দ্য ওয়ারিয়র’ সিনেমার প্রধান চরিত্রে রূপায়নের পর পশ্চিমা বিশ্বে সুপরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। আন্তর্জাতিক অনেক চলচ্চিত্র উৎসবেও সিনেমাটি পায় ভূয়সী প্রশংসা।
বলিউডে ‘হাসিল’ ও ‘মকবুল’ ইরফানের গ্রহণযোগ্যতা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। তবে, বক্স অফিসে সাফল্য পেতে অনেকটা সময় লেগেছিল তার। ২০০৭ সালে ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’ দিয়ে বলিউডে নিজের আসন পাকাপোক্ত করে নেন তিনি। একইসঙ্গে সিনেমাটির জন্য তিনি পেয়ে যান সেরা পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।
২০১১ সালে নিজেকে তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে যান দারুণভাবে। ‘পান সিং তোমার’ সিনেমায় একজন দৌড়বিদের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। সিনেমাটি তাকে এনে দেয় সেরা অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৩ সালে ‘দ্য লাঞ্চবক্স’ সিনেমার জন্য দর্শক ও সমালোচক সবাই সার্বজনীনভাবে তার অভিনয়ের প্রশংসা করেন। এছাড়া তার অভিনীত ‘পিকু’, ‘কারওয়া’ ‘তালওয়ার’ ও হিন্দি মিডিয়াম দারুণ সফলতা পায়।
বলিউড ছাপিয়ে হলিউডেও একের পর এক সম্মানজনক সিনেমায় অভিনয় করেছেন ইরফান খান। যার মধ্যে রয়েছে ‘দ্য অ্যামেইজিং স্পাইডারম্যান’, ‘লাইফ অব পাই’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ ও ‘ইনফার্নো’। অস্কারে বাজিমাত করা ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ও রয়েছে সে তালিকায়। অভিনয় করেছেন বাংলাদেশেও। খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’ সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয়ে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে।
দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ইরফান খান। সিনেপ্রেমী দর্শক তাঁকে আজীবন মনে রাখবে, বলিউড নামের ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে কুর্নিশ জানাবে, ইতিহাসের ডায়েরিতে তাঁর নামেও অনেকটা জায়গা চিরকাল সমৃদ্ধ হয়ে থাকবে।