সর্বনাশা মাদক ইয়াবা নিয়ে দেশের প্রথম মামলা দায়ের হয় রাজধানীর গুলশান থানায় ২০০২ সালে। কিন্তু ১৯ বছর চলে গেলেও মামলাটির বিচার শেষ হয়নি। তবে পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম বলেছেন, মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করি দ্রুত বিচারকাজ শেষ হবে। এতে সরকারপক্ষই জয়ী হবে।
প্রসঙ্গত, মামলাটি পরিবেশ আদালতে বিচারাধীন। মামলার আসামি সফিকুল ইসলাম ওরফে জুয়েল, সোমনাথ, মোশফিক ও এমরান জামিনে রয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, মামলার সব আসামি জামিনে রয়েছেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটির কার্যক্রম ১২ বছর বন্ধ ছিল। বর্তমানে কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি দ্বিতীয় দফায় সাক্ষী দিয়েছেন। তিনি বলেন, যেহেতু এটি প্রথম ইয়াবা উদ্ধারের মামলা, এ মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করি
জানা গেছে, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম ২০০২ সালে রাজধানীর গুলশানের নিকেতন এলাকা থেকে বিভিন্ন মাদকসহ গ্রেফতার করে বিত্তবান পরিবারের সন্তান সফিকুল ইসলাম জুয়েলকে। এ সময় জব্দ করা হয় হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক, মাদক সেবনের সরঞ্জাম, মোবাইল ফোন, একটি প্রাইভেট কার, ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ টাকা ও পর্নো সিডি। এর মধ্যে নেশাজাতীয় ১২০টি ট্যাবলেট ছিল, যার গায়ে ‘ডব্লিউ ওয়াই’ লেখা। এই ট্যাবলেটের নাম যে ইয়াবা তা তখন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারাও জানতেন না।
এ ঘটনায় অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উপঅঞ্চলের পরিদর্শক এনামুল বাদী হয়ে ঐ বছরের ১৯ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান অধিদপ্তরের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের তেজগাঁও সার্কেলে কর্মরত। মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করেছি। এতে চার মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে সাক্ষ্যও দিয়েছি আদালতে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, মামলার প্রধান আসামি সফিকুল, তার তিন সহযোগী ও তার বাবা সামছুল ইসলাম এবং ভাই শরিফুল ইসলামসহ ছয় জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৩ সালের ১৪ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করি। চার্জশিটে বলা হয়, সফিকুল ও তার তিন সহযোগী সোমনাথ, মোশফিক ও এমরানের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত। সফিকুলের বাবা সামছুল ও ভাই শরিফুল মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করে অপরাধ করেছেন। সামছুল ও শরিফুল পলাতক ছিলেন। চার্জশিটে সাক্ষী করা হয় ১৫ জনকে, যার মধ্যে ৯ জন সরকারি কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলার বাদী ডিএনসির পরিদর্শক এনামুল হক ও ছানোয়ার হোসেন চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। এছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে প্রেষণে থাকা তিন কর্মকর্তা নিজ দপ্তরে ফিরে গেছেন। তাদের মধ্যে আবার দুই জন অবসরে গেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার অন্যতম সাক্ষী মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এ এ এম হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি আশাবাদী মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে ও আসামিরা সাজা পাবে।